রাতের আঁধারেই জামালপুর ছাড়েন ডিসি, গা ঢাকা দিয়েছেন সেই নারীও

|

রাতের আঁধারে জামালপুর ছেড়েছে অন্যত্র চলে গেছেন ওএসডি হওয়া জামালপুরের বির্তকিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীর।

নারী অফিস সহকর্মীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণের ঘটনায় তাকে ওএসডি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আজ (রোববার) দুপুর দেড়টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার সাক্ষরিত এক আদেশপত্রে আহমেদ কবীরকে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়।

তার স্থলে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় পরিকল্পনা মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ এনামুল হককে।

তবে এ আদেশ আসার আগেই জনরোষ আতংকে রাতের আঁধারে জামালপুর ছেড়ে চলে যান আহমেদ কবির।

সূত্র জানায়, বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শনিবার রাত ৩টায় তিনি জামালপুর ত্যাগ করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।

এদিকে উধাও হয়ে গেছেন সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নামের সেই নারী অফিস সহকর্মীও। সকাল থেকেই হদিস মিলছে না তার।

এ ঘটনায় এলাকায় শোরগোল পড়ে গেছে। স্থানীয়দের অনেকেই প্রশ্ন ছুঁড়ছেন, অভিযুক্ত ওই নারী সহকর্মী কি নিজ থেকে আত্মগোপনে গেলেন? নাকি ডিসি আহমেদ কবীরই তাকে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন?

ওই নারী সহকর্মীর অবস্থান জানতে সাংবাদিকদের সঙ্গে জামালপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা।

তাই নিরাপত্তার খাতিরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রোববার নিয়মিতভাবেই কর্মক্ষেত্রে যোগদানের কথা ছিল সাধনার। তবে তাকে ডিসি অফিসে পাওয়া যায়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজিব কুমার সরকার জানিয়েছেন, বিনা নোটিশে কর্মক্ষেত্রে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা অনুপস্থিত রয়েছেন। তাকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।তবে সাধনার মা জানিয়েছেন, তার মেয়ে বেড়াতে গিয়েছে।

সাধনার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি জানান, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।

এদিকে জানা গেছে, নারী অফিস সহকর্মীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণের ঘটনায় ওএসডি হওয়া ডিসি আহমেদ কবীরের শুদ্ধাচার সনদ কেড়ে নেয়া হবে।

দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, আহমেদ কবীরকে এর আগে শুদ্ধাচার পদক দেয়া হয়েছিল। সেটি ফিরিয়ে নেব। যাতে এ ধরনের কাজ ভবিষ্যতে অন্য কেউ না করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, জেলার একজন ডিসি সবার অণুকরণীয় চরিত্র। ডিসি থেকে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক কাণ্ড কাম্য নয়। তাই আগামীতে ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নৈতিকতা বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়া হবে।

তিনি যোগ করেন, আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

তদন্ত করে সাবেক এ ডিসি ও নারী সহকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ডিসি আহমেদ কবীরের ওএসডি ও বদলীতে সন্তুষ্ট নয় জামালপুরবাসী।

তার চাকুরিচ্যুতসহ দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি তুলেছেন স্থানীয় একটি মহল। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নারী সহকর্মী সাধনারও বিচার চাইছেন তারা।

প্রসঙ্গত সম্প্রতি জামালপুরের ডিসির একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে ডিসি আহমেদ কবীরের সঙ্গে তার অফিসের এক নারীকর্মীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে ঘটনাটি ‘সাজানো’ বলে দাবি করেন ডিসি আহমেদ কবীর। ওই ঘটনায় জামালপুরসহ সারা দেশের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

(সূত্র: যুগান্তর)


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply