রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের অবকাঠামোগত কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। কাগজে-কলমে এ টার্মিনাল রয়েছে।
টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত জায়গা না থাকায় ফুলবাড়িয়া ও গুলিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম দুই বর্গকিলোমিটার রাস্তাজুড়ে এলোপাতাড়ি বাস ও লেগুনা রেখে স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজটে পড়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এক সময় টার্মিনালটি ইজারা দিলেও বর্তমানে অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি বছর কর্পোরেশন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ওই স্থানে টোলের টাকা উঠিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন কতিপয় পরিবহন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। এছাড়া টার্মিনালটির স্থান নির্ধারণ ও অবকাঠামো নির্মাণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না নগর কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফুলবাড়িয়া টার্মিনালের কথা জিজ্ঞেস করলে গুলিস্তানের বিআরটিসি বাস টার্মিনালকেই দেখিয়ে দেন সেখানকার বাসিন্দারা। সেখানে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫টি বাস রাখার মতো জায়গায় কয়েকটি বিআরটিসি বাস দাঁড়ানো। বাসে পাটুরিয়াগামী যাত্রী তোলা হচ্ছে।
বিআরটিসি স্ট্যান্ডের সামনে রাস্তার পূর্বপাশে সুন্দরবন মার্কেটের চারপাশে ইলিশসহ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি ও লেগুনা স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে।
বঙ্গভবনের সামনে থেকে গুলিস্তান বঙ্গবাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দিয়ে রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। রাস্তাটি সরু ও দুই পাশে বাস রাখায় রিকশা চলাও দায় হয়ে পড়ছে।
এছাড়া টিএন্ডটির রমনা ভবনের সামনের রাস্তা থেকে বায়তুল মোকাররম হয়ে জাতীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ স্ট্যান্ড বানিয়ে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
ফুলবাড়িয়ায় বনশ্রী পরিবহন, গাজীপুর পরিবহন, কালশী রুট ও চিড়িখানা রুটের গাড়ি ও রাস্তার পূর্বপাশে এন মল্লিক ও বান্দুরা পরিবহনের স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে।
গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে পুলিশ সদর দফতর ও নগর ভবনমুখী রাস্তাটির দুই পাশে অসংখ্য লেগুনা (হিউম্যান হলার) গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে উৎসব, বন্ধন, শীতল পরিবহন, জাতীয় স্টেডিয়ামের ১ ও ২নং গেটের সামনে রাস্তার দুই পাশে বোরাক, বোরাক এসি, দোয়েলসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেটের সামনে থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠার রাস্তা পর্যন্ত স্ট্যান্ড বানিয়ে রাস্তা দখল করে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত লাখ লাখ যাত্রী প্রতিদিন যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বেশি বিপাকে পড়ছে রোগী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির ভাষ্যমতে, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের কোনো অবকাঠমো না করেই বছরের পর বছর রাজস্ব আহরণ করা হচ্ছিল।
গত ৪-৫ বছর ধরে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও ডিএসসিসির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে স্ট্যান্ডটির ইজারা বন্ধ করে টোলের টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেয়া হচ্ছে। এ সুযোগে পুরো গুলিস্তানকে বাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড বানিয়ে টোলের টাকা আত্মসাৎ করছে ওই চক্র।
আলীমুজ্জামান, সোলায়মান ও বাকের নামে কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, বঙ্গবাজার সংলগ্ন আনন্দবাজারের জায়গাটি ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থা ডিএসসিসি ওই স্থানটি আদৌ দখলমুক্ত করে বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এছাড়া এখানে অবস্থিত টার্মিনালটি বিআরটিসির মালিকানাধীন। ফুলবাড়িয়া এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের কোনো বাস টার্মিনালের জায়গা নেই। এজন্য গুলিস্তান ফুলবাড়িয়ার রাস্তাজুড়ে স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে।
ডিএসসিসির একাধিক সূত্র জানায়, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবাজার হতে আনন্দবাজার পর্যন্ত এলাকার অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ওই স্থানে আধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়।
তবে ওই এলাকায় মার্কেট রাজনীতির কারণে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের টানাটানিতে প্রকল্পটি বর্তমানে হিমাগারে চলে গেছে।
ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নিতাই চন্দ্র সেন বলেন, আমরা শুধু গুলিস্তান হতে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ড ইজারা দিয়েছি। ফুলবাড়িয়া এক সময় ইজারা দেয়া হলেও বর্তমানে ইজারা দেয়া হয় না।
তবে কী কারণে ইজারা দেয়া হয় না? তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন সম্প্রতি বলেন, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালকে নির্ধারিত জায়গায় স্থানান্তর করতে অবকাঠামো নির্মাণে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র: যুগান্তর
Leave a reply