গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে অফিসে বসে প্রকাশ্যে ধূমপানের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অফিসে বসে পিআইও নুরুন্নবী সরকারের প্রকাশ্যে ধূমপানের চিত্র ক্যামেরাবন্দী করা হয়।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে স্থানীয় সাংবাদিকরা বৃহস্পতিবার বিকেল যান পিআইও’র অফিসে। এসময় তিনি বক্তব্য দিতে রাজি না হয়ে সাংবাদিকদের উপর উত্তেজিত হয়ে উঠেন। পরে সাংবাদিকদের সামনেই নিজ চেয়ারে বসে সিগারেটে দিয়াশলাইয়ের আগুন দেন নুরুন্নবী। এসময় তিনি নিজের দাপট ও দাম্ভিকতা দেখিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধূমপানে মগ্ন থাকেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, পিআইও অফিস কক্ষে বসেই নিয়মিত ধূমপান করেন। অফিসে উপস্থিত যে কোন মানুষের মাঝেও প্রকাশ্যে ধূমপান করেন তিনি। অফিসে বসে পিআইও’র প্রকাশ্যে ধূমপানের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ। পিআইও’র ধূমপানের বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলের মধ্যে।
অফিসে বসে পিআইও’র ধূমপানের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছোলাইমান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষেধ। এছাড়া অফিসে বসে কোনো ব্যক্তি বা কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকাশ্যে ধূমপান করতে পারেন না। অফিসে ধূমপান কারা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে (পিআইও) হিসেবে যোগ দেন নুরুন্নবী সরকার। যোগদানের পর থেকেই সরকারী বরাদ্দের টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ উত্তোলনসহ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগে নানা সময়ে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে চারটি। এরমধ্যে তিনটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা।
এছাড়া ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে আরও একটি মামলাসহ সুন্দরগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক জিডি আছে। আর ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত টিআর-কাবিখা, গৃহ নির্মাণসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের হিসেব নেই তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের তদন্তে বেশকিছু প্রমাণও মিলেছে। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই পিআইও নুরুন্নবীর নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের ঘটনা। সর্বশেষ জুন ক্লোজিং এ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে চাপ ও হুমকি দিয়ে কাজ না করেই ১৪টি প্রকল্পের ৬ কোটি টাকার বিল স্বাক্ষর করিয়ে নেন পিআইও নুরুন্নবী সরকার। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক গত ৩০ জুন সুন্দরগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন।
একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি এখন পিআইও নুরুন্নবীর ওপেন সিক্রেট। অনিয়ম-দুর্নীতি আর পিআইও’র বিচার দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেন স্থানীয়রা। তারপরেও দাপট আর দাম্ভিকতায় ৫ বছর ধরে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
Leave a reply