ফররুখ মাহমুদ:
আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল। প্রায় ২৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কাউন্সিল ঘিরে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশের কাউন্সিলরদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন প্রার্থীরা। দলের জন্য নিজেদের ত্যাগ ও শ্রমের কথা উল্লেখ করে চাচ্ছেন ভোট।
এর আগে, ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের সর্বশেষ (৫ম) কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রুহুল কবির রিজভীকে সভাপতি ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছিলেন ভোটাররা।
এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থিতা করছেন ৯ জন। তারা হলেন- হাফিজুর রহমান, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মোঃ ফজলুর রহমান খোকন, মোহাম্মদ মামুন বিল্লাহ (মামুন খান), মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মোঃ এরশাদ খান, এসএম সাজিদ হাসান বাবু এবং এবিএম মাহমুদ আলম সরদার। এদের মধ্যে এগিয়ে আছেন হাফিজ, শ্রাবণ, খোকন ও মামুন খান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৯জন প্রার্থী থাকলেও এই নেতাদের মধ্যেই মূলত ভোটের লড়াইটা হবে।
বাগেরহাটের ছেলে হাফিজুর রহমান পারিবারিকভাবেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তার বাবা মো. সোলায়মান মোল্লা বর্তমানে বারুইপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বড় ভাই মিজানুর রহমানও ছাত্রদলের সাথে জড়িত ছিলেন। হাফিজ স্বেচ্ছাসেবকদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের অনুসারী।
হাফিজুর রহমান ২০০১ সালে স্থানীয় একটা মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। ২০০৩ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০০৫ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রদলের ১ নম্বর সদস্য এবং ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ লাভ করেন। সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হওয়ার পর হাফিজ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন। হাফিজ বর্তমানে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে মাস্টার্স করছেন।
নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, ১/১১-এর আন্দোলন, ২০০৭ সালের ছাত্র বিপ্লবে আমি সক্রিয় ছিলাম। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের দলীয় আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছি। ২০০৯ সালের মে মাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলায় মারাত্মকভাবে জখম হই।
কাউন্সিল বিষয়ে তিনি বলেন, আমি প্রত্যাশা করি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আসন্ন ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে যোগ্য, ত্যাগী, মেধাবী ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। যেই নেতৃত্ব দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে সাথে নিয়ে আপসহীন দেশনেত্রী তথা গণতন্ত্রের দ্রুত মুক্তি, তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিতকরণসহ একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিটি ইতিবাচক কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
সভাপতি পদের অপর শক্তিশালী প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শ্রাবণের বাড়ি যশোর জেলার কেশবপুর থানায়। শ্রাবণ কলেজ জীবন থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০১ সালে এসএসসি ও ২০০৩ সালে এইচএসসি পাশ করে শ্রাবণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বাংলা বিভাগ থেকেই অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
জানান, ১/১১, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের কর্মসূচিতে সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন করেছিলেন। তার নামে ২৬টি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারী এই প্রার্থী সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন।
দলীয় কর্মসূচি পালনের সময় আজিজ মার্কেটের সামনে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে জেল যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শ্রাবণ বলেন, বিগত সময়গুলোতে দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি ডেডিকেশন বেশি ছিল। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে নেতৃত্বগুণ ও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি-নিবেদন বিবেচনায় নিয়ে কাউন্সিলররা এবং সামগ্রিকভাবে দল আমাকে সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেবে বলে আমি আশাবাদী।
সভাপতি পদে উত্তরবঙ্গের একক প্রার্থী মো. ফজলুর রহমান খোকন। সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি। বগুড়ার সন্তান খোকন ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করেন। ২০০২ সালে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০০৮ সালে অর্নাস এবং ২০১০ সালে মার্স্টাস সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে অধ্যয়নরত আছেন।
কলেজে ভর্তি হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতা শুনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হন। জেলার শেরপুর কলেজে সংগঠনের সাথে সক্রিয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম পদ পান। ২০০৫ সালে ফজলুর রহমান খোকন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দপ্তর বিষয়ক সহ-সম্পাদক পদে মনোনীত হন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক পদ পান।
১/১১ এর আন্দোলন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার স্বদেশে ফেরা ত্বরান্বিত করার কর্মসূচিসহ দলীয় সব কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন খোকন। তার নামে ২৩টি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। ছাত্রলীগের হাতে ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
ফজলুর রহমান খোকন বলেন, কাউন্সিলররা ছাত্রদলের নেতৃত্বে যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবেন। ত্যাগ, পরিশ্রম, দলের প্রতি আনুগত্য এবং সংগঠন পরিচালনার ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের মাধ্যমে নিজেকে কাউন্সিলরদের সামনে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। ১৪ তারিখ কাউন্সিলরদের রায় আমার পক্ষে আসবে বলে আশা করছি।
বরিশালের সন্তান মামুন খান স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ওয়ার্ড ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। পরে ইউনিয়ন ছাত্রদলের নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। সর্বশেষ তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মামুন খান। ২০০৩-২০০৪ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়ে অর্নাস-মার্স্টাস সম্পন্ন করেন। বর্তমানে জাপানিজ স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে অধ্যয়নরত আছেন।
মামুন খান জানান, ১/১১ এর আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। সেসময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর রেড এলার্ট ছিলো তার ওপর। ২০১৩-২০১৫ সালে সাংগঠনিক কাজে নিবেদিত ছিলেন। তার ভাষায়, দল থেকে দেয়া সবধরনের কাজ তিনি সম্পন্ন করেছিলেন।
মামুন খান আরো জানান, মিছিল থেকে আটক এমন ৯ জন নেতাকর্মীকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রিজন ভ্যান ভেঙে আসামি ছিনতাই মামলার অন্যতম আসামি তিনি। সেসময় পাঁচদিন তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়। এ পর্যন্ত তিনি দলের জন্য চারবার জেল খেটেছেন। দলের প্রতি ত্যাগ, পরিশ্রম বিবেচনায় কাউন্সিলে ভোটাররা তাকে জয়ী করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই সভাপতি প্রার্থী।
Leave a reply