রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কিনতে চায় ভারত। মার্কিন সরকারকেও সে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দেশটি। তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে দিল্লির ওপর অসুন্তষ্ট হতে পারে বলে ধারণা করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এ চুক্তি প্রসঙ্গে প্রথম থেকেই আপত্তি তুলে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে দিল্লির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা করছেন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ‘যুক্তি’ বোঝার চেষ্টা করবে।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের ডিসির ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর একটি আলোচনা সভায় যোগ দেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কিনলে ভারতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন এক রুশ সাংবাদিক।
জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, এস-৪০০ কিনতে ভারত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এবং তা মার্কিন সরকারকে জানানোও হয়েছে। নিজের দ্বৈত্য ক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আমি। এ চুক্তি আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আশা করি সবাই তা বুঝবেন।
কলকাতার প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজারে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও মার্কিন-আপত্তি উড়িয়ে এ চুক্তি নিয়ে কি শেষমেশ এগোবে ভারত? তা যদিও পরিষ্কার করেননি জয়শঙ্কর। তবে কার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা হবে আর কার কাছ থেকে কেনা হবে না, সার্বভৌম দেশ হিসেবে ভারত তা নিজেই ঠিক করতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, শুরু থেকেই বলে এসেছি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কী সরঞ্জাম কিনব, কোথা থেকে কিনব, সার্বভৌম দেশ হিসেবে তা ঠিক করার অধিকার এবং স্বাধীনতা রয়েছে আমাদের। প্রত্যেকের সেটা বোঝা উচিত। কী সরঞ্জাম কিনব, রাশিয়ার কাছ থেকে কিনব কিনা, সেটা অন্য কোনো দেশ ঠিক করে দেবে তা একেবারেই পছন্দ নয় আমাদের। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু কেনা উচিত, কি উচিত নয়, সেটাও কেউ বলে দেবে না।’
২০১৫ সালে প্রথম ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কেনায় আগ্রহ প্রকাশ করে ভারত। গত বছর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের সময় তা নিয়ে ৫৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে খুব শিগগিরই ওই প্রযুক্তি হাতে পাবে ভারত। কিন্তু এ মুহূর্তে তাতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেন ও সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন নিয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সংঘাত রয়েছে। তার মধ্যে ২০১৬-র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়েও ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালে ‘কাউন্টারিং আমেরিকাজ অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাঙ্কশন্স অ্যাক্ট’ (কাটসা) আইন চালু করে মার্কিন সরকার। তার আওতায় রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনলে যে কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে তারা। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর নানাবিধ বিধি-নিষেধ চাপাতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রভাব পড়তে পারে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুঝে-শুনেই এগোতে চাইছে ভারত। কারণ জম্মু-কাশ্মীর প্রশ্ন এ মুহূর্তে মার্কিন সরকারকে পাশে দরকার। রাশিয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে।
গত পাঁচ দশক ধরে ভারতকে অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দিচ্ছে রাশিয়া। তবে ভারতের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও মার্কিন সরকার সুর নরম করতে পারে বলে ধারণা কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
তাদের যুক্তি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনকে চাপে রাখতে ভারতকেও সমান প্রয়োজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তাই ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে বেগ পেতে হবে তাদের।
Leave a reply