জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলে এক ভর্তিচ্ছুকে আবাসিক সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে হল ‘বাধন’ এর সভাপতি ও আরেক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, আল বেরুনী হলের ২৩০ নং কক্ষে ওই ভর্তিচ্ছুকে চার হাজার টাকার বিনিময়ে সিট ভাড়া দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
সিট ভাড়া দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও জানা যায়। এর মধ্যে একজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাঁধন’- এর হল ইউনিটের সভাপতি।
আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থী ও সিরাজ নামে ওই ভর্তিচ্ছুক জানায়, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সে ভর্তি কোচিংয়ের জন্য তারই এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল ইসলামের কাছে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকার জায়গা না পাওয়ায় মোহাইমিনুল ওই ভর্তিচ্ছুকে হলে নিয়ে আসে। পরে তাকে রাখার জন্য একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ৪৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সোহেল রানাকে জানায়। এরপর তাদের দুজনের মধ্যস্থতায় চার হাজার টাকার বিনিময়ে ভর্তিচ্ছুকে ২৩০ নং কক্ষে সোহেলের সিটে থাকতে দেয়।
হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আল বেরুনী হলের ২৩০ নং কক্ষটিতে সাধারণত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাঁধন’- এর হল ইউনিটের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক থাকেন। কিন্তু ‘বাঁধন’- এর হল ইউনিটের বর্তমান সভাপতি সোহেল রানা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় বেশ আগে থেকেই ‘পলিটিকাল ব্লকে’ থাকেন। আর সাধারণ সম্পাদক কিছু দিন আগে অন্য কক্ষে চলে গেছেন। ফলে ওই কক্ষটি ফাঁকা ছিল।
বুধবার টাকার বিনিময়ে সিট ভাড়া দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে আল বেরুনী হলের জ্যেষ্ঠ ছাত্রলীগ কর্মী এনামুল হকের সমঝোতায় ভর্তিচ্ছু ওই বহিরাগতকে ভাড়ার তিন হাজার টাকা ফেরত দিয়ে বের করে দেয়া হয়।
সিরাজ নামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, মোহাইমিনুল ভাই প্রথমে হলে রাখবে বলেছিল। পরে সোহেল ভাইয়ের কাছে নিয়ে যায়। টাকার ‘কন্ট্রাক্ট’ মোহাইমিনুল ভাইয়ের সাথে হয়েছিল। তখন থাকার জন্য তারা দু’জন চার হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি সে টাকা দিয়েছিলাম।’
তবে টাকার বিনিময়ে বহিরাগতকে হলে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছে সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘টাকা বিনিময়ের বিষয়টি আমি জানিনা। মোহাইমিনুল আমার কাছে ওই ছেলেকে নিয়ে আসে। কিন্তু তার থাকার জায়গা না থাকায়, আমার ২৩০ নং কক্ষের সিটে থাকতে দেই। এর বেশি কিছু জানিনা।’
মোহাইমিনুল বলেন, ‘আমার প্রতিবেশীর কাছ থেকে কেন আমি টাকা নেব। আমার কাছে কোচিংয়ের জন্য এসেছিল, আমি তাকে সোহেলের রুমে থাকতে দেই। সে আমার কাছে কোচিংয়ের জন্য এগারো হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু কোচিং বাবদ সাত হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি চার হাজার টাকা আমার কাছে ছিল। সে যাওয়ার সময় তাকে চার হাজার টাকা ফেরত দেই।’
ছাত্রলীগ কর্মী এনামুল হক বলেন, ‘হলে টাকার বিনিময়ে বহিরাগত রাখার বিষয়টি জানার পরে মোহাইমিনুল ও সোহেলকে ডাকি। তারপর ঘটনা শুনতে চাই। তারা টাকার বিনিময়ের বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে ভর্তিচ্ছু ওই বহিরাগতের চার হাজার টাকা মোহাইমিনুলের কাছে থাকার বিষয়ে জানতে পারি। পরে তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে বলি।’
এ বিষয়ে আল বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ আশরাফুল আলম কিছু জানেন না। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।’
এদিকে হলের একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রাধ্যক্ষ আশরাফুল আলম হলের খোঁজ রাখেন না। কোন বিষয়ে তাকে ডাকলেও পাওয়া যায় না। হলে সিট ভাড়ার বিষয়টিও তাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ নেন নি।
Leave a reply