নগরীর মিরপুরে দ্রুতগতিতে মোটরবাইক চালানো রেসাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকাভিত্তিক রেসার গ্রুপ দল বেঁধে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে মহল্লার অলিগলিসহ রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা নিজেদের জীবন ঝুঁকির পাশাপাশি অন্যের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলছে। এ গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্য উঠতি বয়সের তরুণ। পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। মিরপুরের মূল সড়কের পাশাপাশি মহল্লার বেশির ভাগ সড়ক প্রশস্ত হয়েছে। অধিকাংশ সড়কে বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক রেস হয়। রেসাররা বিভিন্ন কলাকৌশল নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে। এতে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মিরপুর ২ নম্বর লাভ রোড, মিরপুর ১ নম্বর রাইন খোলা, চিড়িয়াখানা রোড, আগারগাঁও (ডাম্পিং এরিয়াসংলগ্ন প্রশস্ত সড়ক), মিরপুর ১১/এ এভিনিউ ২, (মিল্লাত ক্যাম্পসংলগ্ন প্রশস্ত সড়ক), মিরপুর ১২ নম্বর বি-ব্লক, পল্লবী থানা রোড, মিরপুর ১২ নম্বর সিরামিক রোড, ঝিলপাড়, সাগুফতা মোড় থেকে মিরপুর ১২ নম্বর ডিওএইচএস গেট পর্যন্ত, মিরপুর ৭ নম্বর আরামবাগ ও মিরপুর ১৩ নম্বর (মন্দিরের পেছনের সড়ক), মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর (মূল সড়ক যখন ফাঁকা থাকে) এলাকায় বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রেসারদের মহড়া চলে। সড়কের বেশির ভাগ অংশে গতিরোধক নেই। আবার কিছু সড়কে গতিরোধক থাকলেও তা বেশ কিছুদূর পর পর দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় সময় পাল্লা দিয়ে বাইক রেস হয়। একই সড়কে এপাশ-ওপাশ করে এঁকেবেঁকে রেস দিতে গিয়ে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এরপরও ভয়-ডরহীন রেসারদের উৎপাত বন্ধ হয়নি। মিরপুর ২ নম্বর লাভ রোড, ১২ নম্বর সাগুফতা ও ১৩ নম্বর (মন্দিরের পেছনের সড়ক) এলাকার সড়ক বেশ প্রশস্ত ও মনোরম। সন্ধ্যার পর অনেক লোকের সমাগম ঘটে। প্রেমিক ঝুটির আড্ডাও থাকে। রেসাররা থাকে বেপরোয়া। পালাক্রমে রেস দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে কেউ কেউ। কিছুক্ষণ পর পর ব্রেক চেপে পেছনের চাকাসহ পুরো শরীর শূন্যে উঠায়। আবার স্ট্যান্ড নামে বিভিন্ন রেস হয়। তা দেখে অনেকেই হাততালি দেয়। কেউবা বাহস করেন।
মিরপুর ১২ নম্বর বি-ব্লকের ২, ৩ ও ৪নং সড়ক বেশ কিছুদিন আগে প্রশস্ত করা হয়েছে। অনেক সড়কে গতিরোধক নেই। সন্ধ্যার পর পালাক্রমে চলে বাইক রেস। আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা এ নিয়ে অশান্তিতে রয়েছেন। বিশেষ করে হাঁটতে বের হওয়া তরুণীরা নাজেহাল হন। অনেকেই হাঁটা বন্ধ করে দিয়েছেন। সড়কের পাশের বাড়ির মালিক রিয়া প্রিয়ন্তী বলেন, ৬-৭ মাস আগে বাসার সামনের রাস্তা অনেক বড় হয়েছে। হাঁটার একটা জায়গা হল। কিছুদিন না যেতেই এ সড়কে নিরাপদে হাঁটা যায় না। দ্রুতগতিতে মোটরবাইক চলে। মেয়েদের দেখলে গতি বেড়ে যায়। তারা প্রতিনিয়ত আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অনেকে হাঁটা বন্ধ করে দিয়েছে। থানায় অভিযোগ করলেও কাজ হয় না। এদের পুলিশ মাঝে মধ্যে আটক করে। কান ধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে মোটরবাইক রাইডার পরিচিতি দেয়া এক যুবক বলেন, উচ্চ শব্দের জন্য বাইকের চেলেঞ্জার পরিবর্তন করে হলার লাগানো হয়। আর বাইক চালানোর সময় সাইড স্ট্যান্ড নামিয়ে রাস্তায় ঘর্ষণের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়। এ সময় নিজেদের মধ্যে হিরোইজম ভাব আসে।
পল্লবী জোনের এসি (ট্রাফিক) সাইকা ইয়াসমিন পাশা বলেন, মূল সড়কে যানজটের কারণে সাধারণত মহল্লার মধ্যে নতুন রাস্তায় বাইক রেস হয়। বাইক রেসের কারণে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে। এটা বেআইনি ও কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা বাইক দিয়ে রেস করে তাদের জীবন যেমন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তেমনি আমরা যারা সাধারণ পথচারী তাদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অনেক সময় তাদের ধরতে গিয়ে পুলিশের গায়েও ধাক্কা লাগে। পল্লবী জোনের এসি এসএম শামীম বলেন, মাঝে মধ্যে এ ধরনের রেসার ধরে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
Leave a reply