নোবেল পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল না, তবে এত দ্রুত পাবো ভাবিনি: অভিজিত

|

এ বছর আরো দুজনের সঙ্গে যৌথভাবে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন ভারতের অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন। নীচে তা তুলে ধরা হলো :

সংবাদ প্রতিদিন: নোবেল জয়ের জন্য আরও একবার আপনাকে অভিনন্দন।

অভিজিৎ : ধন্যবাদ।

অমর্ত্য সেনের পর ফের বাঙালির ঝুলিতে নোবেল। কেমন লাগছে?
-(একটু থেমে) কী উত্তর দিই বলুনতো। ভাল তো লাগবেই।
না, মানে এত তাড়াতাড়ি আপনার গবেষণা স্বীকৃতি পাবে ভেবেছিলেন?

– ভেবেছিলাম কোনও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ পাবেন। পঁয়ষট্টি বা সত্তরের পরই তো সাধারণত পান। আটান্ন বছরেই পাব,ভাবিনি। তবে স্বীকৃতি নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। বিশ্বাস করতাম, একদিন পাবই। তবে এত তাড়াতাড়ি পাব, সত্যিই ভাবিনি।

দারিদ্র দূরীকরণ নিয়ে আপনার গবেষণা সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেল। আপনি তো দারিদ্রকে নতুন করে ব্যাখ্যা করেছেন?

– হ্যাঁ। দারিদ্র‌কে শুধু ক্রয়ক্ষমতার আলোয় বেঁধে রাখার চেষ্টা করিনি। বরং বলতে চেয়েছি, দারিদ্র‌্য মানে কোনও একটা সমস্যা নয়। অনেকগুলো সমস্যার সমাহার। ভুল ডাক্তারের কাছে যাওয়াটাও দারিদ্র‌।‘ইনফরমেশন’ কম থাকাটাও দারিদ্র‌।

দারিদ্র‌ বোঝাতে গিয়ে আপনি প্রায়শই গরিব চাষি ও কোলিয়ারি শ্রমিকের উদাহরণ টানেন।
– (একটু হেসে) হ্যাঁ, বোঝার সুবিধার জন্য উদাহরণটা বেশ ভাল। আসলে জীবনযাপনের ধরন আলাদা বলেই রোজগার এক হলেও কয়লা শ্রমিকের ‘রিয়েল ইনকাম’ চাষির তুলনায় অনেক কম। কারণ, তার পারিপার্শ্বিকতা। আসলে একটা মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনাও তাঁর দারিদ্রের পরিমাপক। চাষিকে তাঁর খাবার কিনতে হয় না। খাদ্যশস্যের দামবৃদ্ধি (পড়ুন মুদ্রাস্ফীতি) প্রত্যক্ষভাবে তাঁকে প্রভাবিত করবে না। কিন্তু খনি শ্রমিককে করবে।

ভারতের আর্থিক মন্দা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকও তো সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ছেঁটেছে। আপনার কী মত?

– ভারতের সিংহভাগ অর্থনীতিবিদের সঙ্গে আমিও একমত। সরকারও বুঝতে পারছে, অর্থনীতির হাল ভাল নয়। গত ক’বছর আগে যা দেখেছি, এখন তার চেয়ে পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এই সঙ্কট মোকাবিলায় ‘কেইনসিয়ান মডেল’ অনুসরণ করা উচিত। মানে ‘ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্ট মডেল।’ ‘পাবলিক স্পেন্ডিং’ বাড়ালে মানুষের হাতে টাকা বেশি আসবে। ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে।
জিডিপি, নোটবন্দি, জিএসটি নিয়ে কিছু বলবেন?

– জিডিপি আরও নামবে। নোটবন্দির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। জিএসটি চালু করাটা খারাপ নয়। কিন্তু যে পদ্ধতিতে করা হয়েছে, তাতে আপত্তি আছে।
আপনি তো থিওরিটিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে গিয়ে দারিদ্র‌কে এমপিরিক্যালি বোঝার চেষ্টা করেছেন?

– হ্যাঁ, আমি দেশ ধরে ধরে মাইক্রো লেভেলে দারিদ্র‌কে বোঝার চেষ্টা করেছি। গ্রামবাংলাতেও দীর্ঘদিন কাজ করেছি।
গ্রাম বাংলা বলতে কোথায়?

– লিভার ফাউন্ডেশনের হয়ে বীরভূমে প্রচুর ফিল্ড ওয়ার্ক করেছি। ডা. অভিজিৎ চৌধুরির সঙ্গে একসঙ্গে প্রকল্প তৈরি করে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের নিয়ে কাজ করেছি। ওঁদের প্রশিক্ষিত করতে চেয়েছি।
গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক মানে কোয়াক ডাক্তারের কথা বলছেন?

– আমি ওদের সেলফ কোয়ালিফায়েড স্বাস্থ্য পরিষেবক বলি। এঁদের মধ্যে অনেকে আয়ুর্বেদ বা হোমিওপ্যাথি নিয়ে কোর্স করেছেন। আমি ২০০০ সাল থেকে এঁদের নিয়ে কাজ করছি। জানেন, ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষ অসুস্থ হলে এঁদের কাছেই যান? ভুল ডাক্তারের কাছে যাওয়াটাও কিন্তু দারিদ্র‌।

সাউথ পয়েন্ট স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ। কলকাতা আপনার শিরা-উপশিরায়। কলকাতাকে মিস করেন?

– কলকাতার লোকজনের মতো মেলামেশা, আড্ডা, আন্তরিকতা, আতিথেয়তা, কুশল বিনিময় কোথাও দেখিনি। খুব মিস করি।

নোবেলজয়ের পর কতগুলো ফোন এল কলকাতা থেকে?
– অগুনতি। বহু ফোন ধরতে পারিনি। কিছু মনে করবেন না। এবার আমায় ফোনটা রাখতে হবে। প্রেসের লোকজন অপেক্ষা করছেন।

ঠিক আছে। আপনাকে আবার অভিনন্দন। কলকাতায় কবে আসছেন?
– ২২ অক্টোবর দিল্লিতে একটা অনুষ্ঠান আছে। ওই দিন সন্ধেবেলা কলকাতায় ফিরব।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply