জীবনের প্রথম চাহিদা খাদ্য। জন্মের পর শিশু চিৎকার দেয় খাবারের জন্য। মা তখন মুখে দুধ তুলে দেন। এই খাবার খাওয়ার কতগুলো আদব রয়েছে। সেগুলো জেনে নিলে খাওয়াটাও ইবাদত বলে গণ্য হবে।
* খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা : খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা একান্ত জরুরি। হাদিসে আছে, হুযাইফা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘শয়তান ওই খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়নি। (মুসলিম-৩৭৬১)।
* লোকমা উঠিয়ে খাওয়া : খাবারের আরেকটি শিষ্টাচার হল কোনো লোকমা পড়ে গেলে তা উঠিয়ে খাওয়া। হজরত (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কারও খাবারের লোকমা পড়ে যায় তবে, তা থেকে ময়লা দূর করবে এবং তা খেয়ে ফেলবে, শয়তানের জন্য রেখে দেবে না। (মুসলিম-৩৭৯৪)।
* খাবার চেটে খাওয়া : বেশিরভাগ লোক দাওয়াতে গেলে আশপাশের লোক কী ভাববে সে জন্য প্লেটে ঝোল, পোলাও রেখেই হাত ধোয়। অথচ আঙুল চেটে খাওয়ার কথা হাদিসে আছে। কা’ব বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘আমি হজরত (সা.) কে দেখেছি তিনি তিন আঙুল দিয়ে খাচ্ছেন এবং খাওয়া শেষে আঙুল চাটছেন। (মুসলিম-৩৭৯০)।
* ডান হাতে খাওয়া : ডান হাতে খেতে হবে। অনেকে চামচ হাতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে স্টাইল করে বাম হাতে খায়। এ ব্যাপারে হাদিসে আছে, হজরত (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবে ডান হাতে খাবে, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়। (মুসলিম-৩৭৬৩)।
* বসে ডান হাতে পানি পান করা : অনেকে অফিসে যাওয়ার কালে তাড়াহুড়া করে দরজায় দাঁড়িয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে চলে যায়। এটা আদবের বরখেলাপ। বসে পানি বা শরবত পান করতে হবে। তিন শ্বাসে পান করতে হবে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পান করতেন। বলতেন, এভাবে পান করা নিরাপদ ও তৃপ্তিদায়ক। (বুখারি-৫২০০, মুসলিম-৩৭৮২)।
* বসে খাওয়া : বড় হোটেলে বুফে খাবার দেয়া হয়। সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে খায়। এটা নাকি আধুনিকতা। আমরা যেন এমন আধুনিক না হই যে, নিজের বিবেককেই মেরে ফেলি। দাঁড়িয়ে খাওয়া ঠিক নয়, বসে খাওয়ার হুকুম রয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘দাঁড়িয়ে খাওয়া বেশি খারাপ, বেশি দূষণীয়।’ (মুসলিম-৩৭৭২)।
অনেকে ছোট বাচ্চা না খেলে তার অবশিষ্ট খাবার ডাস্টবিনে বা ফ্ল্যাটের গার্বেজ বক্সে ফেলে দেয়। এটা কবিরা গোনাহ্। সেই খাবার বরং আল্লাহ্র নামে কোনো পশুপাখিকে দেয়া যেতে পারে। খাওয়ার সময় আরও কিছু নিষিদ্ধ বিষয় হল-
* পাত্রে ফুঁ দেয়া : অনেকে চা কফি গরম বলে সবার সামনেই কাপে ফুঁ দিয়ে ঠাণ্ডা করতে চায়। এটা ডাক্তারি মতে, মুখের জীবাণু কাপে চলে যেতে পারে আবার শরিয়ত মোতাবেকও ঠিক নয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে বা ভেতরে শ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী-১৮১০)।
* খাবারের দোষ না ধরা : এ কাজটা সবচেয়ে বেশি করা হয় কোনো বিয়ের দাওয়াত, বউভাতে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গেলে। একশ্রেণির মানুষ আছেন খেতে বসে ‘বোরহানিটা ভালো না’; ‘রোস্টটা একটু শক্ত লাগছে’- ইত্যাদি বলে থাকেন। এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, ‘হজরত (সা.) কোনো খাবারের দোষ বের করতেন না। মনে চাইলে খেতেন, অপছন্দ হলে রেখে দিতেন।’ (বুখারি-৪৯৮)।
খাবারের যে আদবগুলো জানলাম সেগুলো বাস্তব জীবনে মেনে চললেই রাব্বুল আলামিনের শোকরিয়া আদায় করা হবে।
লেখক : এজে ইকবাল আহমদ, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক
Leave a reply