ভারতের নয়াদিল্লি এখন একটা ‘গ্যাস চেম্বার’। গত ১৭ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ আবহাওয়া পরিস্থিতি। বাতাস বিষাক্ত। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হাঁসফাঁস করছে লাখ লাখ মানুষ।
জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ির ভেতরে থাকতে বলা হয়েছে বাবা-মায়েদের। ভয়াবহ এই বায়ুদূষণ শুধু দিল্লিতেই আটকে নেই।
ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকাতেও। ছুটছে রাজস্থানেও। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট নিজেই এই শঙ্কার কথা বলেছেন। খবর এএফপি ও এনডিটিভির।
সোমবার সকাল থেকেই ঘন ধোঁয়াশা ছিল দিল্লিতে। রাজধানীজুড়ে রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এদিন বাতাসে দূষিত কণা পিএম-২.৫-র মাত্রা ছিল সাধারণের তুলনায় ২০ গুণ বেশি।
এদিন থেকে ফের গাড়ি চলাচলে জোড়-বিজোড় প্রক্রিয়া চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেজরিওয়াল সরকার। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ দিল্লির দূষণের দুই প্রধান কারণের একটি হচ্ছে, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকদের এই খড় পোড়ানো।
আরেকটি যানবাহনের ধোঁয়া। প্রায় ১৫ লাখ গাড়ি চলে প্রতিদিন। বিশেষজ্ঞদের সাফ কথা, খড় পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। কিন্তু দূষণ নিয়ে সচেতনতার মধ্যেও রোববার পাঞ্জাবজুড়ে ২৮৫৬টি ক্ষেতে নাড়া পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। সাংরুর, পাতিয়ালা, ফিরোজপুর, ফরিদকোট, বাথিন্দা থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষেত পোড়ানোর ঘটনা পাওয়া গেছে। দিল্লি
ও পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম এবং নয়ডার অধিবাসীদের অভিযোগ, বৃষ্টিতেও লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। শ্বাস নিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। চোখ-মুখ জ্বালা করছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় চাষিরা খড় পোড়ানো বন্ধ করেননি।
নাড়ার সেই ধোঁয়া উড়ে আসছে দিল্লিতে। এতেই সৃষ্টি বিষাক্ত ধোঁয়াশা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, যারা খড় পোড়াবে তাদের জরিমানা দিতে হবে।
আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হবে। তাতেও খড় পোড়ানো বন্ধ হয়নি। বরং একে সমর্থন করছেন কিছু রাজনীতিক। দীপাবলি উৎসব হয়ে গেছে চারদিন আগে। সে উৎসবের পটকাবাজির ধোঁয়ায় পরদিন থেকে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
এর চারদিন পরেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। দিল্লির বেশ কিছু এলাকা যেমন আরকেপুরমে পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ এতটাই বেশি পরিমাণে বাতাসে পাওয়া গেছে যে, বাসিন্দাদের জন্যে যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পদার্থের উপস্থিতি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী বাতাসে পিএম ২.৫ নামের পদার্থটি যদি প্রতি কিউবিক মিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম করে থাকে, তাহলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কিন্তু আরকেপুরম এলাকায় সকালের দিকে প্রতি কিউবিক মিটারে প্রায় ৯৫৫ মাইক্রোগ্রাম উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
Leave a reply