ফেসবুকে ফিশিং-স্ক্যাম এড়িয়ে নিরাপদ থাকতে করণীয়

|

ফেসবুকের যে লক্ষ্য রয়েছে তার একটি অংশ হলো- ফেসবুক মানুষকে সেই ক্ষমতা দান করে যার মাধ্যমে মানুষ তার কিছু তথ্য শেয়ার করে বন্ধু বা পরিবারের সাথে একটি অর্থবহ যোগাযোগ তৈরি করবে এবং একই সাথে পছন্দনীয় আঞ্চলিক ব্যবসায়ে সমর্থন দিতেও পারবে। এর পাশাপাশি তারা নিজেদের আসক্তি, অভিজ্ঞতা এবং সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর উপর ভিত্তি করে কোনো কমিউনিটিও গঠন করতে পারবে।

ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষ যে বন্ধন কিংবা যোগাযোগ তৈরি করছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা প্রয়োজন। এ কারণেই আমরা চাই প্রত্যেকে ফেসবুক ব্যবহার করার সময় নিরাপদ বোধ করুক। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টগুলো নিরাপদ রাখার জন্য আমাদের কিছু টুলস এবং ফিচার রয়েছে। আমরা নিয়মিত আমাদের পলিসি উন্নতকরণ এবং আপডেট করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি যেন কোনো প্রোফাইল বা পেজ থেকে ঘৃণা ছড়ানো হলে কিংবা বিভ্রান্তিমূলক কোনো পোষ্ট করা হলে আমরা তা প্রতিরোধ করতে পারি।

বাংলাদেশে অনলাইনে নিরাপদ থাকার গুরত্ব সবাই বোঝে, কিন্তু যখন এটা বাস্তবায়নের সময় আসে তখন এর চিত্রটা ভিন্ন হয়। বাংলাদেশেসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সকল আকারের ব্যাবসা বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। কোনো কমিউনিটি গ্রুপের অ্যাডমিন, বিজনেস পেজের মালিক, সাংবাদিকসহ সমাজের বিশিষ্টজনদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ রাখার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কেননা অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি তাদের কটাক্ষ এবং স্পর্শকাতর বিষয়ে তথ্য জানার জন্য চেষ্টা করে।

এখানে সাইবার অপরাধের প্রাচীনতম রূপ ফিশিং এবং স্ক্যামকে এড়িয়ে চলার জন্য কিছু টিপস দেওয়া হলো।

ফিশিং কী:

ফিশিং হলো যখন কোনো ব্যক্তি সন্দেহজনক ম্যাসেজ কিংবা লিংক পাঠিয়ে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। ফিশিং এর বিভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমনঃ ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল, পোস্ট, ম্যাসেজ কিংবা ভুয়া ওয়েবসাইট। সাধারণত একজন ফিশার স্বনামধন্য কোম্পানির কোনো কর্মচারী হওয়ার দাবি করে কিংবা আপনার পরিচিত কোনো ব্যক্তি হবার অভিনয় করে যেন আপনি তাকে আপনার পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করেন। যদি তারা আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে, তাহলে তারা আপনার অ্যাকাউন্টকে স্পাম পাঠানোর জন্য ব্যবহার করবে।

ফিশিং থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়ঃ
১) সন্দেহজনক ইমেইল বা ম্যাসেজ পাঠানো হলেঃ আপনার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত ম্যাসেজ ফেসবুকের পক্ষ থেকে fb.com,facebook.com অথবা facebookmail.com থেকে প্রেরণ করা হয়। আপনি ফেসবুক অ্যাপ কিংবা www.facebook.com এই ঠিকানায় প্রবেশ করে আমাদের নিকট থেকে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজগুলো দেখতে পারবেন। এবং টাকা চেয়ে, উপহারের নাম করে কোন ম্যাসেজ কিংবা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করার হুমকিপূর্ণ ম্যাসেজগুলোকে বিশ্বাস করবেন না।

২) লগ-ইন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা যাবে নাঃ ফেসবুক কখনই আপনার পাসওয়ার্ড সম্পর্কে জানতে চাইবে না এবং কখনই আপনাকে অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে আপনার পাসওয়ার্ড পাঠাবে না। তাই লগ-ইন সংক্রান্ত তথ্য কখনই কারো কাছে প্রকাশ করবেন না।

৩) সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন নাঃ আপনি যদি কোনো সন্দেহজনক ইমেইল কিংবা পোস্ট দেখতে পান যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে তা ফেসবুক থেকে দেওয়া হয়েছে তাহলে ওই লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। এক্ষেত্রে একটি পরামর্শ হলো, যদি কোনো লিংক ক্ষতিকর হয় তাহলে ওই নাম কিংবা ইউআরএল লাল বর্ণে পেজের উপরে দেখা যাবে এবং তাতে লাল বর্ণের একটি ত্রিভূজ অঙ্কিত থাকবে।

৪) ইমেইলের উত্তর দেওয়া যাবে নাঃ আপনার পাসওয়ার্ড, সামাজিক সিকিউরিটি নম্বর কিংবা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চেয়ে যদি কোনো ইমেইল পাঠানো হয়, তাহলে তার উত্তর করবেন না।

৫) ফেসবুকে রিপোর্ট করাঃ যদি কোনো ইমেইল কিংবা ফেসবুক ম্যাসেজ সন্দেহজনক মনে হয় তাহলে [email protected] এই ঠিকানায় রিপোর্ট করতে হবে। যদি কোনো কথোপকথনকে রিপোর্ট করতে হয় তাহলে তা ডিলিট করার আগে তার স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে হবে। যদিও অন্যপক্ষের ইনবক্স থেকে ম্যাসেজগুলো ডিলিট হবে না। রিপোর্ট করাই অবমাননাকর কন্টেন্ট কিংবা স্পাম সম্পর্কে ফেসবুককে অবগত করার সর্বোত্তম পন্থা। রিপোর্ট লিংক কন্টেন্টের খুব কাছাকাছি থাকে।

৬) অতিরিক্ত সিকিউরিটি ফিচার এর ব্যবহারঃ আপনার অ্যাকাউন্ট সিকুরিটি বৃদ্ধির জন্য কোনো ব্যক্তি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করলে সে ব্যাপারে অ্যালার্ট কিংবা টু ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন চালু করে রাখা উচিত।

স্ক্যামার কিংবা ফিশারদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনাকে অতিরিক্ত সতর্কবার্তার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এতে আপনি কোনো ব্যাক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন কিনা জানতে পারবেন।

• ফিশিং এর ব্যাপারে সবচেয়ে সাধারণ কৌশল হলো মানুষের আবেগকে পুঁজি করে তাকে ভুল পথে পরিচালিত করা। স্ক্যামাররা এমন একজন হওয়ার ভান করে যাকে আপনি চেনেন এবং তারপর তারা আপনার কাছে সাহায্য এবং অর্থ চাইবে। তারা সাধারণত আপনার বন্ধু, আত্মীয় স্বজন কিংবা বিপদে পড়েছে এমন ব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণ করে অভিনয় করে থাকে।

• কিছু স্ক্যামার আছে যারা আপনাকে রোমান্টিক ম্যাসেজ পাঠাবে যাতে আপনার বিশ্বাস অর্জন করতে পারে। তারা এটি করে থাকে যাতে তারা আপনাকে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে রাজি করাতে পারে কিংবা আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য সহজেই পেতে পারে।

• ফিশারদের আরও একটি কৌশল হল, আপনাকে এমন একটি ম্যাসেজ পাঠাবে যা আপনাকে পুরস্কার দাবি করার জন্য একটি পেজের ঠিকানায় প্রবেশ করতে বলবে। কিন্তু সমস্যা হলো পুরস্কার দাবি করার জন্য আপনাকে মেম্বারশিপ নিতে হবে কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। অন্যান্য ফিশিং ম্যাসেজ এর মতো এসব ক্ষেত্রেও বানান ভুল কিংবা দুর্বল গ্রামার লক্ষ্য করা যায়।

ফিশারদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন মনে করলে কী করতে পারেন?

যদি আপনি দুর্ঘটনাক্রমে আপনার ইউজার নাম কিংবা পাসওয়ার্ড প্রবেশ করে থাকেন তাহলে অন্য কোনো ব্যক্তি আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে শান্ত থেকে নিচের কাজগুলো করুনঃ

• যদি আপনি এখনও আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারেন, তাহলে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে এবং অন্যান্য সকল অপরিচিত ডিভাইস থেকে লগ আউট করে আপনার অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ করতে পারেন।

• যদি আপনার ইউজার-নেম কিংবা পাসওয়ার্ড কাজ না করে এবং আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ না করতে পারেন তাহলে অ্যাকাউন্ট রিকভার করার টুলটি ব্যবহার করুন।

• আপনার অ্যাকাউন্টে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটেছে কিনা সেটা “রিভিউ রিসেন্ট অ্যাক্টিভিটি” এবং ইমেইলে ফেসবুক থেকে প্রেরণকৃত ম্যাসেজগুলো চেক করে জানতে পারবেন।

• আপনি যদি মনে করেন আপনি কোনো প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তাহলে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন। আর আপনি যদি আপনার ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত তথ্য ভুলক্রমে দিয়ে থাকেন তাহলে ব্যাংক কিংবা ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন এবং ফেসবুকে ওই অ্যাকাউন্ট কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে ভুলবেন না।

অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত তথ্য জানার জন্য ভিজিট করুনঃ https://www.facebook.com/help/

(ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ফেসবুক কর্তৃক প্রেরিত।)


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply