কক্সবাজার প্রতিনিধি:
হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ।
আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য কক্সবাজার মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র তালিকাভূক্ত নদী দখলকারী ও মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুল খালেক চৌধুরী।
বিতর্কিত এ মনোনয়নপ্রাপ্তির খবরে অসন্তোষ উঠেছে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। আওয়ামী লীগের চলমান দলীয় শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই দলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত বিএনপির এ নেতাকে মনোনয়ন দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে বাঁকখালী নদী দখলের দায়ে বাংলাদেশ নদী কমিশনের তালিকাভুক্ত দখলকারী হিসেবে নাম রয়েছে মহেশখালীর শাপলাপুরের আব্দুল খালেক চেয়ারম্যানের।
এর আগে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নদ-নদী দখলের অভিযোগে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি যাতে জাতীয় বা স্থানীয় কোন ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন এবং একইসাথে কোনও ব্যাংক ঋণও না পান এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে যথাক্রমে নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দিয়েছেন।
একই নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
জানা যায়, আব্দুল খালেক দীর্ঘ ২০ বছর বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রকাশিত বই ‘সমৃদ্ধ কক্সবাজার’ ও ‘তৃণমূল’ নামে দু’টি বইয়ে আব্দুল খালেকের নাম পরিচয় রয়েছে গ্রামের ঠিকানাসহ। এছাড়া কক্সবাজার বিএনপি’র জেলা কমিটির তালিকায় এখনো নাম আছে তার।
মহেশখালী থানা বিএনপির সভাপতি ড. আব্দুল মোতালেব-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম এম.কমে’র কমিটির ২৮ নম্বর সদস্য ছিলেন সদ্য নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচনের মনোনয়ন পাওয়া এই আব্দুল খালেক।
অভিযোগ আছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেন বহুল আলোচিত খালেক চেয়ারম্যান। মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার আত্মীয় হওয়ার সুযোগ নিয়ে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বনে যান আব্দুল খালেক ।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, “ক্ষমতা বদলের সাথে সাথে রূপ বদলে যায় খালেকের। এক সময় তিনি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে সুবিধাবাদী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।”
শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান সরওয়ার বলেন, “এক সময় বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন খালেক চেয়ারম্যান। উপজেলা সভাপতির ভায়েরা হওয়ার সুবিধা নিয়ে তিনি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।”
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদী দখল করে বিশাল পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করেছেন খালেক। প্যারাবন কেটা এবং নদী দখলের অভিযোগে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
নদী দখলদারের মধ্যে জেলা প্রশাসনের ৪০০ জনের তালিকায় কয়েকজন প্রভাবশালী দখলদারের মধ্যে খালেক নাম সবার উপরে।
বিআইডব্লিউটিএ ৫১ জন প্রভাবশালী দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায়ও আছেন আব্দুল খালেক।
যদিও নদী দখলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্টে। সেই হিসেবে আব্দুল খালেককের মনোনয়ন হাইকোর্টের রায়ের অবমাননা হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আব্দুল খালেক বলেন, “নদী কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ যেই তালিকায় তাকে নদী দখলদার বানিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল তালিকা। যেই জমি নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এটি দখল করা নয়, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও রয়েছে।”
Leave a reply