টেকনাফ আ’লীগের সভাপতি হলেন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী

|

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কেন্দ্রের সকল নির্দেশ অমান্য করে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী।

গতকাল টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তালিকা ভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী হাম জালালকে সভাপতি ঘোষনা করা হয়।

হাম জালালের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় শীর্ষে থাকা জালাল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছোট হাবিবপাড়ার হাজী খলিলুর রহমানের ছেলে।

এ বছরের জানুয়ারিতে ৩০০০ ইয়াবা সহ টেকনাফে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলো হাম জালাল। এর আগে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে ইয়াবা নেয়ার সময় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলো জালাল।

এছাড়া, কিছুদিন আগে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে তার ছোট ভাই ইয়াবা ব্যবসায়ী বাহাদুর নিহত হয়েছে।

টেকনাফের আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, হাম জালালকে কাউন্সিলে প্রার্থী হতে না দিতে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জেলা নির্দেশনা অমান্য করে হাম জালালকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষনা করে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের কারণেই হাম জালাল আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে পেরেছে।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, হাম জালাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি ৩ হাজার ইয়াবা সহ টেকনাফ থানায় গ্রেফতারও হয়েছিলেন হাম জালাল। তার পুরো পরিবার এই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। কিছুদিন আগে জামিনে এসে হাম জালাল আবারও ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। হাম জালালকে আটক করার চেষ্টা করছে টেকনাফ থানা পুলিশ।

ওসি প্রদীপ বলেন, টেকনাফকে মাদক মুক্ত করার জন্য পুলিশ দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে হাম জালালের মতো একজন চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে পারা খুবই দুঃখজনক।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের বিশেষ অতিথি জেলা পিপি এডঃ ফরিদুর আলম বলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন সেখানে জালালের মতো চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে সভাপতি পদে প্রার্থী করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর। সম্মেলন চলাকালেই জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে হাম জালালকে বাদ দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু নুরুল বশর কোন নির্দেশনা না মানলে সম্মেলনে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা কাউন্সিল না করেই চলে আসেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জানান, হাম জালাল দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করছেন। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। হাম জালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ ও মামলা নেই।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, হাম জালালের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার বিষয়টি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার জানানো হয়েছিলে। বার বার নিষেধ করার পরও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে হাম জালালকে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর সভাপতি ঘোষনা করার বিষয়টি দুঃখ জনক।

দলের গঠনতন্ত্রের বিরোধী ভাবে কাউন্সিল করায় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সকল কার্যক্রম বাতিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply