বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক প্রস্তাবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে দেয়া মার্কিন স্বীকৃতি বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৩৭ দেশ ভোটাভুটিতে অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে বিপক্ষে প্রস্তাবটি পাস হয় ১২৮-৯ ভোটে।
৩৫টি দেশ অধিবেশনে হাজির থাকলেও ভোটে অংশ নেয়নি। আর ২১টি দেশের কোনো প্রতিনিধি জরুরি এই অধিবেশনে হাজির হননি।
ভোট শুরুর আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, যেসব দেশ নানাভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে তারা যদি জেরুজালেমের স্বীকৃতির বিপক্ষে ভোট দেয়, তাহলে সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হবে।
শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের এই হুমকি অবশ্য কেউ তেমন পাত্তা পায়নি। সামরিক খাতে মার্কিন সহায়তা পাওয়া শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। দেশগুলো হলো ইরাক, আফগানিস্তান, মিশর, জর্দান, পাকিস্তান ও কেনিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভোট দিয়েছে একমাত্র ইসরায়েল। এছাড়া ফিলিপাইন ও কলোম্বিয়া ভোটদান থেকে বিরত ছিলো। সামরিক সহায়তা পাওয়া শীর্ষ ১০ দেশের আরেকটি ইউক্রেন অধিবেশনে হাজির হয়নি।
অন্যান্য খাতে মার্কিন সহায়তা পাওয়া শীর্ষ ১০ দেশের ৯টিই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। দেশগুলো হলো- আফগানিস্তান, জর্দান, পাকিস্তান, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সিরিয়া, কঙ্গো, নাইজেরিয়া ও ইরাক। এই তালিকায় একমাত্র দক্ষিণ সুদান ভোটদান থেকে বিরত ছিলো।
যেহেতু বেশিরভাগ দেশ সহায়তা বন্ধে ট্রাম্পের হুমকিতে দমে যায়নি, তাই এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে- মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন হম্বিতম্বির আসলেই কোনো কার্যকারিতা আছে? নাকি পুরোটাই ফাঁকা বুলি?
সিএনএনের ভাষ্যকার ফিল মাড ট্রাম্পের হুমকিকে ফাঁকা বুলিই মনে করেন। কঠোর ভাষায় এমন আচরণের সমালোচনা করে তিনি প্রেসিডেন্টের আচরণকে ‘কূটনৈতিক পতিতাবৃত্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
সিআইএ’র ‘কাউন্টার টেরোরিস্ট সেন্টার’ এর সাবেক এই উপপরিচালক মনে করেন, মিশর আর পাকিস্তানের মতো দেশকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা বন্ধ করবে না। কারণ, এসব দেশ আইএস বা অন্যান্য উগ্রবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।
ফিল মাড বলেন, ‘এমনটা ঘটবেই না। মার্কিনীরা এ কাজ করতে যাবে না। আর প্রেসিডেন্টও এটার পক্ষে দাঁড়াবেন না।’
‘আমি স্পষ্ট বলছি, এটা আসলে কূটনৈতিক পতিতাবৃত্তির সমতুল্য। আমরা লোকজনকে বলছি, যদি তোমরা আমাদেরকে ভোট না দাও, তাহলে আমরা টাকা দেব না। তোমার মন যদি আমেরিকার নীতিতে সায় না দেয়, তাহলে আর্থিক সহায়তা দেব না’, বলেন ফিল।
এদিকে সিএনএন ও আল জাজিরার বিশ্লেষণধর্মী দুটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে যে সামরিক সহায়তা, তা যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থেই দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ওই সব তার সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি করে। সামরিক সহায়তা বন্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষতির শঙ্কাই বেশি। উদাহরণ হিসেবে ইরাক ও আফগানিস্তানের কথাই ধরা যাক। দেশ দুটিতে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে হামলা চালানোর মাধ্যমে সামরিকভাবে জড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে উভয় দেশেই গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকে সামরিক সহায়তা দিতে হয় ওয়াশিংটনকে। আফ্রিকার বহু দেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
সামরিক খাতের বাইরে বিভিন্ন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র যে সহায়তা দেয়, তা বন্ধ করাও মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী। কারণ, সহায়তার অর্থে যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেয়া হয় সেগুলোর বেশিরভাগই আমেরিকান কোম্পানির মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়। এছাড়া মার্কিনীদের চাকরির একটি বড় ক্ষেত্র এসব উন্নয়ন প্রকল্প। সহায়তা বন্ধ করে দিলে বিদেশে বহু আমেরিকান কোম্পানির ব্যবসা এবং মার্কিনীদের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবে।
Leave a reply