বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার ও অপরাধীদের শনাক্ত করতে ফিলিপাইনের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ।
বিশেষ করে অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িতদের বৃত্তান্ত ও আর্থিক বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ফিলিপাইন তাদের বিচার বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশকে তথ্য দেয়ার কথা জানিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় মঙ্গলবার দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়াবলী) মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এর আগে ঢাকায় ফিলিপাইনের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুই দেশের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
ফিলিপাইন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এ নিয়ে কিছু মামলা চলছে। আমরা কয়েকটি বিষয়ে তাদের (ফিলিপাইন) সাহায্য চেয়েছি। যেমন, চুরির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের পরিচয়। এই তথ্য তারা এখনও আমাদের দেয়নি। কিছু আর্থিক তথ্য চেয়েছি। সেটা তারা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
অপরাধীদের পরিচয় ও আর্থিক তথ্যগুলোর নিষ্পত্তি হলে বাংলাদেশে হওয়া মামলার চার্জশিট দিতে সুবিধা হবে। ফিলিপাইন কবে নাগাদ তথ্য দেবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে তথ্য জমা আছে। তাদের অনুমতি সাপেক্ষে দেশটির সরকার এটি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে।
মোমেন বলেন, টাকা ফেরতের প্রসঙ্গে তারা (ফিলিপাইন) ব্যাংক আরসিবিসিকে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা করার কথা জানিয়েছে। আমরা বলেছি, ওই টাকাটা আমাদের দেয়া যেতে পারে। অবশ্য ওদের অন্য রকম যুক্তি আছে।
ফিলিপাইনের যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ফিলিপাইনের ব্যাংকিং আইন লঙ্ঘনের জন্য আরসিবিসিকে জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থের সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা বলেছি, ওটা আমাদের দিতে পার। কারণ, চুরির ঘটনার কারণেই জরিমানা করা হয়েছে।
ফিলিপাইনের বিচার প্রক্রিয়া শেষের সময়সীমা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মোমেন বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সাইবার ক্রাইম নতুন এক চ্যালেঞ্জ। আজ বাংলাদেশ এ সমস্যার শিকার হয়েছে। অনেক দেশই এর শিকার হতে পারে। বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যার সুরাহা করতে পারলে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।
জাতিসংঘে সাইবার ক্রাইম মোকাবেলায় সনদ করা যায় কিনা- এ নিয়ে কাজ চলছে। ওই কাঠামোর অনুপস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা গেলে তা মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে এই কূটনীতিক বলেন, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের অভিজ্ঞতা বা পরিস্থিতি একই ধরনের। এসব ক্ষেত্রে আমরা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারি। এছাড়া ফিলিপাইনের নার্সিং, সিমেন্ট, কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এসব খাতে বিশেষ সুবিধা রয়েছে।
এসব বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক এবং স্মারকের ড্রাফট (খসড়া) হস্তান্তর হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আসিয়ানের মধ্য থেকে ফিলিপাইন যেন কাজ করে, সেই সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলংকায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে।
ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। এই অর্থ চুরিতে দেশের ভেতরের কোনো একটি চক্রের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।
Leave a reply