গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাবার নির্দেশে স্কুলে ঢুকে আলম মিয়া নামে সহকারী শিক্ষককে প্রকাশ্যে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তিন ছেলের বিরুদ্ধে।
শনিবার দুপুরে নলডাঙ্গার খামার দশলিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার শিক্ষকের অভিযোগ, সভাপতি নুর আলম নান্টু তার ছেলে সীমান্ত, জীম ও শাওনকে ফোন করে স্কুলে ডেকে নিয়ে তার উপর হামলা করেন। পরিচালনা কমিটি গঠন এবং শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জেরেই হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তার।
শিক্ষক আলম মিয়া বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন লক্ষে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী শনিবার দুপুরে অফিস কার্যালয়ে প্রিজাইটিং অফিসার, শিক্ষক-কর্মচারী, সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিতে আলোচনা সভা চলছিলো। সভায় উপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ও অন্য সদস্যদের মধ্যে সভাপতি নান্টুর নানা অসদচারণ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এসময় তিনি প্রধান শিক্ষক, অন্য শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ঘটনাটি মোবাইল ফোনে জানিয়ে ছেলেদের স্কুলে ডেকে নান্টু। বাবার ফোন পেয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ স্কুলে ছুটে আসে সীমান্ত, জীম ও শাওন। তারা এসেই গালিগালাজ শুরু করে’।
আলম মিয়ার অভিযোগ, শিক্ষক রুমে পরীক্ষার ফলাফল সীট তৈরি করছিলেন তিনি। এসময় রুমে প্রবেশ করে তাকে গালিগালাজ করে সীমান্ত ও জীম। কিন্তু নিষেধ করায় নান্টু তাদের হামলার নির্দেশ দেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে সীমান্ত ও জীম তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে এলোপাথাড়ি মারধরে আহত করে। ঘটনার সময় সভাপতি নান্টু ও তার ছোট ছেলে শাওন রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো। পরে অতর্কিত হামলা থেকে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে। অভিযুক্তদের মধ্যে শাওন তার স্কুলের ছাত্র ছিলো। এ ঘটনায় সুবিচার দাবিতে নুর আলম নান্টু, ছেলে সীমান্ত, জীম ও শাওনের বিরুদ্ধে সাদুল্যাপুর থানায় লিখিত এজাহার দিয়েছি’।
এদিকে, শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছি। এছাড়া ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ঘটনার প্রতিবাদ ও অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবিতে রবিবার সকাল ১১টার দিকে নলডাঙ্গা শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বাশার বলেন,‘শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক ও দু:খজনক। ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ইউএনও, শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানান তিনি’।
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
তবে অভিযুক্ত নুর আলম নান্টু ও তার ছেলে সীমান্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত ফোনে কল করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত নুর আলম নান্টু নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি খামার দশলিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির টানা তিনি বারের নির্বাচিত সভাপতি।
Leave a reply