গাজীপুর সদর উপজেলায় কেশরিতা গ্রামে রোববার সন্ধ্যায় রওজা হাইটেকের লাক্সারি ফ্যান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ১০ জন শ্রমিকের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হোসেন ঢালীকে প্রধান আসামি করে জয়দেবপুর থানায় ৭ জনের নামে মামলা হয়েছে।
লাশ সনাক্তের পর আবেদনের প্রেক্ষিতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে সোমবার দুপুরে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া লাশ নিয়ে পরবর্তীতে কোনো আপত্তি নিষ্পত্তিতে ১০টি লাশের এবং উপস্থিত স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিনুর ইসলাম ও সিআইডি ফরেনসিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুস সালামসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লাশ হস্তান্তরের সময় দাফন ও পরিবহনের জন্য জেলা প্রশাসকের ঘোষিত জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা করে স্বজনদের কাছে প্রদান করা হয়েছে।
লাশ হস্তান্তরের সময় পুরো হাসপাতাল এলাকায় নিহতের স্বজন ও সহকর্মীদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
এ ছাড়া ওই অগ্নিকাণ্ডে কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) ও জামুনা এলাকার আবদুল মোতালেবের ছেলে মো. হাসান (১৯) আহত হয়েছেন।
যাদের লাশ হস্তান্তর হলো তারা হলেন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মার্তা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ (৩৪), একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম (২২), গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামের বীরবল চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাস (১৮), একই উপজেলার কালনী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল খান (২০), গাজীপুর মহানগরীর নোয়াগাঁও এলাকার লালমিয়ার ছেলে পারভেজ (১৯), ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালী থানার রাঘবপুর গ্রামের সেলিমের ছেলে তরিকুল ইসলাম (১৯), রংপুর জেলার হারাগাছ থানার কাচু বকুলতলা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল (২৩), নরসিংদী জেলার বেলাব থানার চর কাশিনগর গ্রামের মাজু মিয়ার ছেলে সজল (২০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্জারামপুর থানার মোরশেদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ (৩০) ও দিনাজপুর জেলার কাহারুল থানার বারপাইটা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে লিমন(১৯)।
জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশন অফিসার মো. জাকারিয়া খান জানান, তারা রোববার সন্ধ্যা ৫টা ৫২মিনিটে ওই কারখানার তিনতলা ভবনে আগুন লাগার খবর পেয়ে তাদের স্টেশনের চারটি ইউনিট কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা আগুন নেভান। পরে তৃতীয় তলায় ১০ শ্রমিকের লাশ দেখতে পান এবং তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া কয়েকজন আহত হলেও তাদের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি। অপর দিকে কারখানাটির কোনো ফায়ার লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মামুন অর রশিদও।
লাক্সারি ফ্যান কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হোসেন ঢালী সাংবাদিকদের জানান, সরকারি বিধি মোতাবেক নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং তারা যে উৎসব বোনাস ও বেতন পেতেন তাদের পোষ্যদের আজীবন তার সুবিধা প্রদান করা হবে।
তবে তিনি ফায়ার লাইসেন্স ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, সোমবার লাশ হস্তান্তরের সময় তার ঘোষিত ২৫ হাজার টাকা এবং মালিকের পক্ষ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা নিহতদের প্রত্যেকের স্বজনদের প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান ও গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুল ইসলাম জানান, সোমবার থেকে তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহতদের স্বজনরা নিহতদের জামা কাপড়, হাতের ব্যাচলেট, জুতা, গলায় চেইন ইত্যাদি দিয়ে সনাক্ত করেন।
কমিটির অপর সদস্যরা হলেন কল কারখানা পরিদর্শকের ১জন, শিল্প পুলিশের ১জন, জেলা পুলিশের ১জন ও ফায়ার সার্ভিসের ১জন সদস্য। সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিজি মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, তাদের তরফ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হোসেন ঢালীকে প্রধান আসামি করে জয়দেবপুর থানায় ৭ জনের নামে মামলা হয়েছে।
জয়দেবপুর থানার ওসি মো. জাবেদ আলী জানান, সোমবার রাতে লাক্সারি ফ্যান কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হোসেন ঢালীকে প্রধান আসামি করে ৫জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২জনের নামে থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলাটি করেছে নিহত শ্রমিক রাশেদ (৩৪) এর পিতা মো. কামাল হোসেন।
Leave a reply