রাজধানীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে শেওড়া (জোয়ার সাহারা) রেলগেট পর্যন্ত পথের দু’পাশে ফুটপাতসংলগ্ন স্থানে বাহারি ফুল ও শোভাবর্ধন গাছ। মাটিতে বা আধুনিক টবে লাগানো এসব গাছ আর এতে ফোটা ফুলে সড়কটি নন্দন-শোভাই ছড়ানোর কথা।
দিনের বেলা সেই শোভা উপভোগ করতে করতে এ পথ দিয়ে গন্তব্যে ছোটেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই এর চিত্র আলাদা। কিছু স্থানে নামমাত্র রঙিন আলো জ্বললেও অধিকাংশ স্থানই অন্ধকার। এর ওপর অযত্নে ঝোপে পরিণত হওয়া শোভাবর্ধন গাছগুলোর দিকে তাকালে আঁতকে ওঠে বুক।
গা ছমছম এ পথে সন্ধ্যার পরের আরও একটি আতংক ছিনতাই। সেই সঙ্গে ঝোপের আড়ালে চলা মাদক সেবন ও পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপকর্ম বাড়িয়ে দেয় পথচারীদের হৃদযন্ত্রের চাপ। দ্রুতলয়ে তাই পা ফেলেন এ পথের পথিকেরা।
এ পথ ঘুরে ও বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবার পাওয়া গেছে এ চিত্র। পথচারীরা জানান, পর্যাপ্ত বাতি না থাকায় এ এলাকাকে নিরাপদ মনে করে অপরাধীরা। এমন অপরাধ নেই যা এ এলাকায় হয় না।
এদিন দুপুরে দেখা গেছে, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে আর্মি গলফ ক্লাবের প্রবেশমুখ পর্যন্ত প্রায় তিনশ’ ফুট ফুটপাতের পাশ ঝোপঝাড়ে ভরা। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার কারণে ফুটপাত থেকে ঝোপের ভেতরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ব্যস্ত সড়কে একের পর এক গাড়ি ছুটছে।
চার শ্রমিককে এদিন দেখা গেছে একদিকে ঝোপঝাড়ের কিছু অংশ কেটে ফেলতে। তবে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পাশে দায়িত্ব পালন করছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাদের একজন জানান, ঢাবিছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে তারা এ এলাকায় নজরদারি করছেন।
কথা হয় আবদুল আজিজ নামে এলাকার এক শ্রমজীবীর সঙ্গে। তিনি জানান, বাসস্টপেজে তিনি মালামাল ওঠানামার কাজ করেন গভীর রাত পর্যন্ত। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তার দুই পাশেই বখাটেরা ঠাঁই নেয়। ছিনতাইকারী, হিজড়া, পতিতা ওঁৎ পেতে থাকে। আরেকজন জানান, ঝোপের মধ্যে ও টবের আড়ালে চলে ফেনসিডিল পান ও ইয়াবা সেবন। জোয়ার সাহারা এলাকার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী এখানে মাদক সরবরাহ করে।
পাশের ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিলেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের এক রোগীর স্বজন রোজিনা বেগম। তিনি বলেন, ফুটপাতের পাশে এত ঝোপঝাড়। কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই। দিনের বেলায়ই মেয়েদের আতঙ্কের মধ্যে চলতে হয়। তিনি বলেন, এ এলাকায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি থাকলে ভালো হতো।
জোয়ার সাহারা এলাকার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা বলেন, কিছুদিন আগে আমার মামি হাসপাতালে ভর্তি ছিল, তার গোল্ডের জিনিস (স্বর্ণালঙ্কার) নিয়ে গেছে এখান থেকে। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর তাই এ পথে লোক যাতায়াত করে না বললেই চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোনায়েম আহমেদ বলেন, সন্ধ্যার পর উজ্জ্বল আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। কিছু রঙিন বাতি থাকলেও তার অধিকাংশই জ্বলে না। এসব রঙিন বাতিতে আবার মানুষের মুখ চেনার উপায় নেই। এখানে বারবার অপরাধের ঘটনা ঘটলেও নেই নিরাপত্তা প্রহরী।
প্রজাপতি পরিবহনের এক চালক বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে থেকে শেওড়া (জোয়ার সাহারা) বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এই জায়গাটা একেবারেই অনিরাপদ। রাতে এখান দিয়ে হাঁটলে কোনো লোক দেখা যায় না। তিনি বলেন, রাস্তার পাশের এসব ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা দরকার।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেছে, এ বিষয়ে জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। বক্তব্য পাওয়া যায়নি সিটি কর্পোরেশনেরও। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি।
গুলশান জোনের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, জায়গাটি অতটা নির্জন না হলেও ঝোপঝাড় রয়েছে। তিনি বলেন, এ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a reply