ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্ত: মার্কিন সংস্থাকে তদন্তে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইরান

|

তেহরানের বাইরে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তদন্তে যোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (এনটিএসবি)।

টুইটারে পোস্ট করা বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, বুধবারের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইরানের কাছ থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত হয়েছে।

পরিবহন দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্তের দায়িত্বরত সংস্থাটি আরও জানায়, এই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সর্বজনস্বীকৃত একটি প্রতিনিধি দলকে নিয়োগিত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশে সবসময় নজর রাখছে তারা।

এনটিএসবি জানিয়েছে তদন্তে অংশগ্রহণ কী পর্যায়ে সম্ভব হবে তা তারা মূল্যায়ন করছে তারা। কারণ, ইরানের ওপর বিভিন্ন ধরনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক বিষয়ে ইরানের সাথে কাজে জড়িত হতে বাধা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো ব্যক্তি ও সংস্থার।

ইউক্রেনের বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা অস্বীকার করেছে ইরান।

এক বিবৃতিতে ইরান সরকারের মুখপাত্র আলী রাবাই এমন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এসব প্রতিবেদন ইরানের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। যেসব দেশের নাগরিক এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, তারা নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন। বিমানের ব্ল্যাক বক্স তদন্ত প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি।

এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তার কাছে বেশ কিছু গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য রয়েছে, যাতে এই আভাস দিচ্ছে যে তেহরান থেকে উড্ডয়নের পরেই ইউক্রেনের বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইরান। এতে বিমানটিতে থাকা ১৭৬ যাত্রী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৩ কানাডীয় নাগরিকও রয়েছেন।-খবর এএফপি ও রয়টার্সের

তিনি এমন এক সময় এই মন্তব্য করলেন, যখন প্রকাশিত হওয়া একটি ভিডিওতে বিমানটিকে গুলি করার মুহূর্তটি দেখা গেছে।

সেটিসহ সামাজিকমাধ্যমে অন্যান্য ভিডিওতে দেখা গেছে, বুধবার সকালে তেহরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিপর্যয়কর ভুলে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের পিএস৭৫২ ফ্লাইট হামলার শিকার হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস এই ভিডিওটির সত্যাসত্য যাচাই করেছে। ভিডিওতে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানির আগে দ্রুত চলাচলকারী একটি বস্তুকে কৌণিকভাবে উপরে উঠতে দেখা গেছে। সেটি অনুজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছিল এবং অব্যাহত সামনে ধাবিত হয়। কয়েক সেকেন্ড পরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে।

সব মিত্রসহ কানাডার নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য উল্লেখ করে ট্রুডো বলেন, ইরানের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য(এসএএম) ক্ষেপণাস্ত্র ওই বিমানে আঘাত হেনেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা জানি, এটা সম্ভবত অনিচ্ছাকৃতই হবে। কানাডীয়দের প্রশ্ন রয়েছে, তারা তার জবাব আশা করতেই পারে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ অন্যান্য পশ্চিমা নেতৃবৃন্দও তাকে সমর্থন করেছেন। বরিস জনসন বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সমর্থনে তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, যেটা অনিচ্ছাকৃত হামলাই হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আভাস দিয়েছেন, ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা মনে করেন, কিয়েভগামী বোয়িং ৭৩৭ একটি কিংবা দুটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের মুখোমুখি হয়েছে। পরে সেটি তেহরানের বাইরে বিস্ফোরিত হয়েছে।

মার্কিন জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড বৃহস্পতিবার বলছে, বিমান বিধ্বস্তের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের কাছ থেকে তারা অবগত হয়েছেন। কাজেই এই ঘটনার তদন্তে তারা একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে।

বিমান নির্মাতা বোয়িংকেও এই ঘটনার তদন্তে আহ্বান জানিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির বেসামরিক বিমান সংস্থা বলছে, উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরেই বিমানটি অন্ধকারে বিধ্বস্ত হয়েছে। পাইলটের কাছ থেকে কোনো রেডিও বার্তা না পাওয়ায় এই বিপর্যয়ের আভাস দিয়েছে।

বিমানটিতে ৮২ ইরানি, ৬৩ কানাডীয়, ১১ ইউক্রেনের, ১০ সুইডিস, চার আফগান, তিন জার্মানির ও তিন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ইরাকি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এ বিষয়টি প্রকাশ্য হতে শুরু করে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply