সিটি নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আ’লীগ সমর্থিত কর্মকর্তাদের: ফখরুল

|

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মকর্তাদের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, সিটি নির্বাচনে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড আমরা জানি। কে গাড়ির অনুমোদন নেয়ার জন্য ফাইল বদল নিয়ে মন্ত্রীর কাছে গেছেন, কারা নিজের স্কুল পারমিশন নেয়ার জন্য সরকারি জমি নিয়েছেন- এ সব খবর আমাদের কাছে আছে। এ মানুষগুলো যাদের কোনো মোরালিটি নেই তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের দিয়েই আবার ইভিএম মেশিন ম্যানুপুলেটেড করার ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতাসীন দল।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’ এর উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিগত আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে গুম, হত্যা, পঙ্গু হওয়া নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে গুম হওয়া ১০ পরিবারের সদস্যদের হাতে শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।

ইভিএমের বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এর বিরেধিতা করেছি। আমরা বলেছি, ইভিএম দিয়ে কখনোই মানুষের যে রায় তা প্রতিফলন হবে না। আমরা এখনও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এর বিরোধিতা করছি।

তিনি বলেন, সোমবার চট্টগ্রামে উপ-নির্বাচন হয়েছে। সেখানে ভোটারদের ক্ষমতাসীনরা যেতেই দেয়নি ভোটকেন্দ্রে। তার আগে বোমা মেরে লাঠিসোটা দিয়ে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর জিজ্ঞাসা করে বলবে যে, আপনারা পারেননি। পারব কোত্থেকে? যে লাঠি মারে সন্ত্রাসী করে তার সঙ্গে ভদ্র লোকেরা, সাধারণ মানুষ পারবে কোত্থেকে। এটাই বাস্তবতা। যারা ভোটার তারা তো মারামারি করে না। তারা তাদের অধিকারটা প্রয়োগ করতে যায়। কিন্তু সেটা প্রয়োগ করতে দেয়া হয় না।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার আজকে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এমন একটা সমাজ তৈরি করছে, এমন একটা রাষ্ট্র তৈরি করছে যে, সমাজ এবং রাষ্ট্র এ দেশের মানুষের ভবিষ্যৎকে তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। তারপরও বলি, হতাশ হবেন না, ছেড়ে দেবেন না। যত কষ্ট আসুক, যত যন্ত্রণা আসুক, যত অত্যাচার লাঞ্ছনা আসুক এ দেশের মানুষ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে। তরুণরা উঠে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবে, দাঁড়াচ্ছে। সব জায়গায় প্রতিরোধ হচ্ছে, প্রতিরোধ হবে।

সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনে চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমরা এই আক্রমণের স্বীকার হচ্ছি। আওয়ামী লীগ যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সংগ্রাম করেছিল, গণতান্ত্রিক লড়াই করেছিল তারাই স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে দানবে পরিণত হয়েছে। একবার তারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। সেটা করতে যাওয়ার আগে তারা একইভাবে এ দেশের দেশপ্রেমিক হাজার হাজার তরুণ-যুবককে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পরে তারা একইভাবে শুধু খোলসটা পাল্টিয়ে দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সংবিধান সংশোধন করেছে। এই বাংলাদেশ সৃষ্টির যে চেতনা ছিল, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল তাকে ধ্বংস করে দিয়েছে গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে দিয়েছে। তারা তাদের শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে যারা প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন, রাজপথে নেমে এসেছিলেন তারা আজকে অনেকে আমাদের মাঝে নেই। তাদের অনেককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছেন। আর খোঁজ নেই, গুম হয়ে গেছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে অথবা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোটা দেশকে, গোটা জাতিকে একটা নির্যাতনের কারখানা তৈরি করে ফেলেছে।

গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের ছোট ছোট সন্তানদের দিকে তাকিয়ে তিনি আবেগ প্রবণ কণ্ঠে বলেন, আজকে শিশুরা এখানে আছে। ওরা প্রতিমুহূর্তে ভাবে, তার বাবা ফিরে আসবে, আসে না। মা আছেন ভাবেন যে, এই বোধহয় ছেলে দরজা নক করল, আসে না। স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকেন কখন তার প্রিয় মানুষটা পাশে আসবে।

হত্যার মহাউৎসব চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারে যারা আছেন তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন। তারা বক্তৃতা যখন করেন মনে হয় যেন কিছুই হয়নি দেশে, চমৎকার পরিবেশ আছে। দেশের মানুষ খুব ভালো আছে। প্রতিদিন পত্রিকায় দেখবেন একটা হত্যার মহাউৎসব চলছে। আজকে একটা মারাত্মক খবর দেখলাম মহাসড়কে মানুষের শরীরের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ৩-৪ বছরের শিশুকে পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে। হত্যা, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ যেন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে।

আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শফিউল বারী বাবু, মামুন হাসান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, হেল্প সেলের নাসির উদ্দিন শাওন প্রমুখ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply