রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল
মা-মাটি ও মানুষের শিল্পী বংশীবাদক বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান স্মরণে নড়াইলে ১২ দিনব্যাপী “সুলতান মেলা”-২০২০ উদ্বোধনের পর পরই জমে উঠেছে। এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে উদ্বোধনের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গনে দর্শনার্থীদের ভীড়ে জমজমাট হয়ে উঠে।
এবারের মেলায় স্থানীয় ৩৪ সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিল্পীরা সঙ্গীত, নৃত্যসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে।
কনকনে শীতের রাতে সুলতান মঞ্চে শিল্পীদের সুরের স্রোতধারায় শহরে যেন প্রানের স্পন্দন ফিরে এসেছে। নানা বয়সীদের সাথে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলা প্রাঙ্গনে শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন থাকছে চিত্র প্রদর্শনী ও গ্রামীন নানা ধরনের ক্রীড়া উৎসব। মেলায় শতাধিক দোকানী বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী পুরুষের জন্য কসমেটিক, হস্তশিল্প, কুঠিরশিল্পসহ নানা ধরনের পণ্য রয়েছে এসব দোকানে।
এদিকে সুলতানের ৯৫তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত “সুলতান মেলা”-২০২০ সমাপনী দিন আগামী ২৭ জানুয়ারি “সুলতান পদক” প্রদান করা হবে। এবারের মেলায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের আয়োজনে আন্তর্জাতিক আর্টক্যাম্পে বাংলাদেশসহ মোট ৫টি দেশের ২০ জন চিত্রশিল্পী প্রতিদিন ছবি আকছেন। এ খবর সংশ্লিস্ট সূত্রের।
সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ (কিউট)-এর পৃষ্টপোষকতায় ১২ দিনব্যাপি সুলতান মেলায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে থাকছে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, দেশ ও বিদেশের ১১৮টি ছবি নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী, ভারত,জিম্বাবুয়ে, নেপাল এবং দেশের ২০জন চিত্রশিল্পী নিয়ে আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প, রচনা প্রতিযোগিতা, লাঠিখেলা, হা-ডু-ডু, ভলিবল, ঘোড়ার গাড়ি দৌড় প্রতিযোগিতা, সাইকেল রেসসহ গ্রাম্য খেলাধুলা এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শিল্পী সুলতান জন্মেছিলেন সবুজ স্নিগ্ধতায় ছাওয়া নড়াইলের উপকণ্ঠে। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট। পিতা ছিলেন সামান্য রাজমিস্ত্রী। সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবনের আবহ তাই শিল্পী পেয়েছিলেন শৈশবেই।
চির কুমার শিল্পী ছবি একেঁছেন দু’হাতে। ব্যবহার করেছেন দেশজও লতাপাতা শেকড়ের নির্যাস থেকে সংগৃহীত রঙ। মোট ছবির সংখ্যা তিনি নিজেও জানতেন না। তবে লক্ষাধিক হবে। যা তিনি কখনও সংরক্ষণের তাগিদ অনুভব করেননি। যাঁকে খুশি তাঁকে দিয়েছেন অকাতরে। তার অনন্য সৃষ্টির মধ্যে আছে ‘চরদখল’ ‘প্রথম বৃক্ষরোপণ’ ‘মাড়াই’, ‘গ্রামের দুপুর’, ‘দেশপ্রেম’। আর্টপায়ে একজন, মাছ ধরা, বনভুমি ও স্বাধীনতা, বিপ্লব প্রভৃতি। উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বহু ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর ছবিতে গাঁয়ের কৃষকও পেশীবহুল। আদিম সাম্যবাদী সমাজে একজন কৃষক যেমন পুষ্টিহীনতার সাথে পরিচিত ছিল না।
নড়াইলে তাঁর শিশু স্বর্গ, যেখানে বাস করতেন, সেখানে বৃক্ষ এবং দুর্লভ ফুলে ভরা ছিল। ছিল বহু পাখি ও জীব জন্তু। তাদের নিজ হাতে তিনি সেবা করতেন।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর অসুস্থ অবস্থায় যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রামে তাঁকে শায়িত করা হয়। এই শিল্পী স্বাধীনতা, একুশেসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য সম্মাননা এবং পুরস্কার লাভ করেন।
Leave a reply