শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সতর্ক হতে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তেহরানে শুক্রবার জুমার খুতবায় খামেনির মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, ইরানের কথিত সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, যিনি এতদিন সর্বোচ্চ ছিলেন না, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিয়ে কিছু কদর্য কথা বলেছেন।-খবর এএফপির
ট্রাম্পের তথ্যানুসারে, খামেনির হুল ফুটানো বক্তব্য ভুল ছিল। এতে তিনি আমেরিকাকে ভয়ঙ্কর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিকে আমেরিকার চামচা হিসেবে আখ্যা দেন।
টুইটারে ট্রাম্প বলেন, তাদের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাদের লোকজন ভোগান্তিতে রয়েছে। কাজেই তার শব্দের ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
এদিকে তেহরানে ‘ভুলবশত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাকে তিক্ত ট্রাজেডি আখ্যায়িত করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
শুক্রবার জুমার খুতবায় তিনি বলেন, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত আমাদের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির ত্যাগ করে খর্ব করা উচিত হবে না।
খামেনি বলেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা একটি তিক্ত ঘটনা, এটা আমাদের হৃদয়ের মধ্য দিয়ে ভস্ম হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ এটাকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলছেন যাতে মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানির শাহাদত ও ত্যাগকে ভুলে যাওয়া হয়।
‘বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আমরা যখন দুঃখ ভারাক্রান্ত, আমাদের শত্রুরা তখন সন্তুষ্ট। তাদের খুশির কারণ হলো, তারা বিপ্লবী গার্ডসকে নিয়ে প্রশ্ন করার মতো কিছু পেয়েছে।’
সোলাইমানির তারিফ করে খামেনি বলেন, ইরান সীমান্ত ছাড়িয়ে তার পদক্ষেপ ছিল আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য। শত্রুর মুখোমুখি তার প্রতিরোধ ও কঠোরতার পক্ষে রয়েছে আমাদের জনগণ।
সোলাইমানির ছবিকে যারা অমর্যাদা করেছেন, তারা ইরানের লোক কিনা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানি জনগণকে সমর্থনে কথা যে বলে বেড়িয়েছে, তা মিথ্যা।
দখলদার ইসরাইলকে একটি ক্যান্সারের টিউমার আখ্যায়িত করে কেউ দেশটির বিরোধিতা করলে তাকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর যে কোনো মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দশ বারের বেশি ধ্বংস হয়ে যাবে।
গত আট বছরের মধ্যেই এই প্রথম শুক্রবার তেহরানে জুমার নামাজে ইমামতি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় এই নেতা। তিনি বলেন, ড্রোন হামলা চালিয়ে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা মার্কিন প্রশাসনের জন্য লজ্জার। এটা তাদের সন্ত্রাসী চরিত্র।
এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের কঠিন প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। গত ৮ জানুয়ারি ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
ওই হামলার প্রশংসা করে খামেনি বলেন, উদ্ধত শক্তির মুখে থাপ্পর দেয়ার শক্তি ইরানের রয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ আমাদের সহায়।
গত সপ্তাহে তেহরানে ‘ভুলবশত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ইরানের অর্থনৈতিক মন্দায় ব্যাপক চাপে রয়েছে ইরানের সরকার। বুধবার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
ইরানে মতানৈক্যের বিরল দৃষ্টান্তের মধ্যেই কীভাবে বিমানটি ভূপাতিত হয়েছে, তার পূর্ণ বিবরণ দিতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রুহানি।
কিয়েভগামী ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনস বোয়িংয়ের ৭৩৭-৮০০-তে ১৭৬ যাত্রী ছিলেন। এতে অনেক কানাডীয় যাত্রীও ছিলেন। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।
Leave a reply