অবশেষে আশ্রয় মিলল রেলওয়ে ষ্টেশনে ফেলে যাওয়া সেই শতবর্ষী বৃদ্ধার

|

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

অবশেষে আশ্রয় মিলল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশনে ফেলে রেখে যাওয়া শতবর্ষী বৃদ্ধার। ময়মনসিংহের ভালুকার সাড়া মানবিক সংস্থা নামে এক বৃদ্ধাশ্রমে তার আশ্রয় হচ্ছে।

যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদটি দেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রশাসক বরাবর বৃদ্ধার দায়িত্বভার গ্রহণের আবেদন করেন মামুন বিশ্বাস ও সাইফুল মালেক নামে দুজন। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ায় পর তাকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে এখন পর্যন্ত পরিচয় মেলেনি এই বৃদ্ধার পাষণ্ড স্বজনদের।

যমুনা টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল জানান, যমুনা টেলিভিশনে সংবাদটি দেখার পর সিরাজগঞ্জের মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে খ্যাত মামুন বিশ্বাস এবং ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সাড়া মানবিক সংস্থা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক যিনি পথ-শিশু মালেক নামে পরিচিত সাইফুল মালেক আমার সাথে যোগাযোগ করেন। পরে আমারা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নুরুল হক এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের পর শতবর্ষী বৃদ্ধার শারীরিক উন্নতির পর তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সম্মতি প্রদান করেন।

এদিকে অনুমতি পাওয়ার পর সাড়া মানবিক সংস্থার প্রতিনিধি দল শতবর্ষী বৃদ্ধাকে দেখতে যায় গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তার খোঁজ-খবর নেন তারা।

এসময় সাড়া মানবিক সংস্থা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল মালেক জানান, আমি দীর্ঘদিন থেকে পথ-শিশু, রেলওয়ে ষ্টেশন বা বাস ষ্টেশনে পরিচয়হীন বেওয়ারিশ মানুষদের আমার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে তাদের সেবা করি। আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এই কাজ করি। যমুনা টেলিভিশনের সংবাদের সূত্র ধরেই আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসেছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনার পর তার অনুমতি নিয়েই এই বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি।

প্রতিষ্ঠানের সহযোগী মামুন বিশ্বাস জানান, আমরা এই মুহূর্তে শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে নিয়ে যাচ্ছি না। তবে ডাক্তারদের সাথে আমরা কথা বলেছি। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তারপর আমরা তাকে নিয়ে যাব। এসময় তিনি শতবর্ষী বৃদ্ধার সহযোগিতাকারী এবং গণমাধ্যম কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

রহনপুর পৌর কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত শতবর্ষী নারীর সেবারত মালতি বেগম আপ্লুত কণ্ঠে জানান, এই বৃদ্ধার খোঁজ নিতে একজন এসেছিল। কিন্তু তারা জানিয়েছে এই বৃদ্ধা তাদের আত্মীয় নয়। এছাড়া আর কেউ তার খোঁজে আসেনি। এখন আশ্রমে তাঁর আশ্রয় হলে খুব ভাল হবে। আমি অনুরোধ করব তারা যেন এই অসহায় বৃদ্ধ মাকে ভালভাবে দেখাশোনা করে।

গোমস্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাকিবুল ইসলাম মাসুদ জানান, তাঁকে উদ্ধার করে আনার পর প্রচণ্ড শীত আর বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক অবস্থা খুব নাজুক ছিল। আমরা এখানে কয়েকদিন যাবত চিকিৎসা ও সেবা দেয়ার পর বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে আমরা আরও কয়েক দিন তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক জানান, এখন পর্যন্ত ওই বৃদ্ধার আত্মীয় স্বজনের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা তাঁর সার্বিক দেখাশোনা করছি। সাড়া মানবিক সংস্থা কর্তৃপক্ষ আমার সাথে দেখা করে শতবর্ষী বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার পর তাঁর শারীরিক সুস্থতা সাপেক্ষে তাদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।

প্রসঙ্গত রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে ১৪ দিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকার পর গত সোমবার কয়েকজন হৃদয়বান মানুষের চেষ্টায় শতবর্ষী ওই বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হয় গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ওই শতবর্ষী বৃদ্ধার অবশেষে একটি সুন্দর ঠিকানা হতে যাচ্ছে ময়মনসিংহের ভালুকার সাড়া মানবিক সংস্থা নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে।

হাসপাতালে ভর্তির পর শুরুতে কিছু খেতে চাইতেন না এই বয়োজ্যেষ্ঠ। এখন নিজে থেকেই নাস্তা করতে চাইছেন, চা খাবার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন একবার। আর ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে আধো আধো বোলে কখনও ঈশ্বরদী, কখনও যশোর আবার কখনও খুলনার কথা বলছেন।

গত ২৯ ডিসেম্বর রহনপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের দুই নং প্লাটফর্মের পাশে ওই বৃদ্ধাকে ফেলে রেখে যায় দুই ব্যক্তি। স্থানীয়দের ধারণা বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যরাই একটি ভ্যানে করে তাকে গাছের নিচে ফেলে রেখে যায়। তবে বৃদ্ধা এতোটাই দুর্বল ছিলেন যে, তিনি তার নাম-পরিচয় এখন পর্যন্ত জানাতে পারেননি। এছাড়া প্রচণ্ড শীতে জবুথবু বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় তাকে উদ্ধার করে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply