সারা দেশে নতুন ভোটার ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪১ জন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশিত হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকায় স্থান পেয়েছে ৩৫৩ জন হিজড়াও। মারা যাওয়ায় তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৩ লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন।
মোট ভোটার সংখ্যা এখন ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৬ হাজার ১৮৭ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৮২ জন।
সোমবার নির্বাচন ভবনে ব্রিফিং করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম।
তারা বলেছেন, এবার ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে শুধু তাদের খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকিদের বয়স ১৮ বছর হলে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে।
তারা জানান, খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা রিভাইজিং অথরিটির কাছে আবেদন করতে হবে। ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে।
১ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তারা বলেন, ইতিমধ্যে যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের (১৮ বছরের কম) দ্রুততম সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, গত ২৩ এপ্রিল থেকে সারা দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এবারই প্রথম সারা দেশে আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ নেয়া হয়েছে। হালনাগাদে ৯৫ লাখের বেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪১ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি হওয়ায় তাদের ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। বাকিদের তথ্য ইসির সার্ভারে রয়েছে। খসড়া তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ১৬৩, নারী ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৫ এবং হিজড়া ৩৫৩ জন।
এবারও নারী ভোটার কম। হালনাগাদে মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা ১৩ লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৪০ জন ও নারী ৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৬ জন।
দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করা হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৬৩৫ জন। এদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম।
সাইদুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ভোটার সংখ্যা বেড়ে ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৩২৩ জন, নারী ২৬ লাখ ১৩ হাজার ৪২৯ জন ও হিজড়া ৩৫৩ জন। আইন অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের বিধান রয়েছে।
এবার এই বিধান লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন ও বিধির লঙ্ঘন হচ্ছে না। ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের জন্য সংসদ উঠছে। ৩১ জানুয়ারির আগেই তা পাস হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বা বিদেশি নাগরিকেরা কেউ বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পাবে না। এটা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিকের সঙ্গে নতুন অন্তর্ভুক্তদের আঙ্গুলের ছাপ মেলানোর পর ভোটার করা হচ্ছে।
প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও তা অনুসরণ করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ সময় ইসির যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন, আজিজুল ইসলাম, সিস্টেম ম্যানেজার আশরাফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় বাড়িয়ে সংসদে বিল:
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময়সীমা ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৬০ দিন করার বিধান রেখে ‘ভোটার তালিকা সংশোধন আইন ২০২০’ বিল ও ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন আইন ২০২০’ বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে ভোটার তালিকা সংশোধন আইন ২০২০ বিলটি উত্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
এর আগে রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ রহিত করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন আইন ২০২০ বিলটি উপস্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বিল দুটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
‘ভোটার তালিকা সংশোধন আইন ২০২০’ বিলে ২০০৯ সালে প্রণীত ভোটার তালিকা আইনের ১১ ধারার ১ উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এতে ‘জাতীয় ভোটার দিবসে’র সঙ্গে মিল রেখে কম্পিউটার ডাটাবেজে সংরক্ষিত বিদ্যমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময়সীমা প্রতি বছর ২ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির পরিবর্তে ‘২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ’ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
Leave a reply