ভারতে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে যখন বিতর্কের মুখে বিজেপি সরকার তখন সেটি আরও বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। একে একে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সদ্য সাবেক কংগ্রেস সভাপতি অমিত শাহর ৯টি মিথ্যে তুলে ধরলো তারা।
কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ভারতীয় সংবিধানের পাঁচটি ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে যেখানে ধর্মের কোনও ভূমিকা নেই। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার ধর্মকে নাগরিকত্বের ভিত্তি করা হয়েছে এবং এই পদ্ধতি বিভাজনমূলক।
কপিল সিব্বল বলেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ৯টি মিথ্যে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী:
প্রথম মিথ্যে: প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে সিএএ (CAA) বিভাজনমূলক নয়। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেন, ভারতীয় সংবিধানে পাঁচটি ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে যাতে ধর্মের কোনও ভূমিকা নেই। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনেও একই বিধান রয়েছে।
দ্বিতীয় মিথ্যে: মোদি-শাহ জুটি বলেছেন এনআরসি (NRC)-র সঙ্গে সিএএ (CAA)-র কোনও যোগাযোগ নেই। অথচ ২০১৯ সালের এপ্রিলেই অমিত শাহ বলেন যে সিএবি প্রথমে আসবে, তারপরে এনআরসি আসবে। ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বরও অমিত শাহ লোকসভায় সিএবি পাস করার পরে দেশব্যাপী এনআরসি চালু হওয়ার কথা বলেছিলেন।
তৃতীয় মিথ্যে: মোদি ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি সভায় বলেন যে তার সরকার আসার পরে এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। যেখানে ২০ জুন, ২০১৯-এ সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণে এনআরসি-র প্রাথমিক বাস্তবায়ন করার কথা ছিল।
চতুর্থ মিথ্যে: এনআরসি প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে সবাইকে ঠিকভাবে জানানো হয়নি এবং এটি আইনি প্রক্রিয়াও নয়। এটি সম্পূর্ণ অসত্য, কারণ ২০০৩ সালে যখন এনআরসি গৃহীত হয়েছিল, তখন এর ১৪ অনুচ্ছেদে (এ) উল্লেখ করা হয় যে এটি আইনি এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যে একটি পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা রয়েছে।
পঞ্চম মিথ্যে: এনআরসি এখনও শুরু হয়নি, অথচ এনআরসি প্রয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি গত বছরের ১ এপ্রিল থেকেই জারি করা হয়েছে।
ষষ্ঠ মিথ্যে: এসআরসি-র সঙ্গে এনপিআর-এর কোনও সম্পর্ক নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-১৯-এ বলা হয়েছিল যে, এনআরসি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপই এনপিআর।
সপ্তম মিথ্যে: বলা হচ্ছে যে, একজন ভারতীয়ের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন সাহেবের পরিবারের সদস্য, কারগিল যুদ্ধের পুরষ্কার বিজয়ী সানাউল্লাহ খানের নাম অসমের এনআরসি তালিকায় রাখা হয়নি। এখন এমন পরিস্থিতিতে যে মানুষটির নাম উধাও হয়ে গেছে, সে কী করবে?
অষ্টম মিথ্যে: মোদি বলেছেন যে দেশে কোনও ডিটেনশন সেন্টার নেই। অন্যদিকে, একমাত্র আসামেই ৯৮৮ জনকে আটক করে সেখানে রাখা হয়েছে । ২০১৯ সালের জানুয়ারিতেই ভারত সরকার ডিটেনশন সেন্টার স্থাপনের নির্দেশ দেয়।
নবম মিথ্যে: বিক্ষোভ আটকাতে কোনও বলপ্রয়োগ করা হয়নি। অথচ শুধু উত্তরপ্রদেশেই ২৮ জন মারা গেছেন। মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, দোকানপাট পোড়ানো হয়েছে, ঘরে ঘরে ঢুকে লোকজনকে মারা হয়েছে এবং এ নিয়ে লাগাতার মিথ্যে বলে চলেছে বিজেপি সরকার ।
কপিল সিব্বল বলেন যে ১৮৯৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, আমি গর্বিত যে আমি সেই দেশের বাসিন্দা, যা বিশ্বের সমস্ত দেশে ধর্মান্ধতার শিকারদের আশ্রয় দেয়। বিজেপি এই বিষয়টিই বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
Leave a reply