মিশরের রাজধানী কায়রোতে কবরস্থানগুলোতে গৃহহীন মানুষেরা সংসার পাতে। সেখানেই তাদের জীবন অতিবাহিত হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। একটি পরিবারের সদস্যরা হিন্দি সিনেমা দেখছে; মজার দৃশ্যে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আরও একটি পরিবারে এক তরুণ টানটান উত্তেজনা নিয়ে টেলিভিশনে উপভোগ করছে স্থানীয় দুটি ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ।
স্বাভাবিক জীবনের এই ছন্দে হঠাৎ এল এক কফিন বহনকারী শবযাত্রা। এক শিশুকে দাফন করতে এসেছেন তারা। শিশুর স্বজন মহিলারা বিলাপ করছেন।
কবরস্থানে বসবাসকারী এক নারীর নাম সাবরিন। তিনি বলেন, ‘প্রথম প্রথম এখানে থাকতে খুব কষ্ট হত। এখন মানিয়ে নিয়েছি।’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘কখনো কখনো নিজেকেও লাশ মনে হয়। যেন দাফন হয়নি এমন কোন লাশ আমি।’
সাবরিনের স্বামী আল-ফারাবির জন্ম এই কবরস্থানেই! সাতষট্টি বছর বয়েসী এই বৃদ্ধ চান না তার উত্তরপ্রজন্ম এই কবরস্থানে তার মত সারা জীবন কাটিয়ে দিক। ছেলে আহমেদ সাইদ রাস্তার পাশের এক খাবারের দোকানে চাকরি করেন। দিনে আয় হয় ৩০ মিশরীয় ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা দেড়শোর টাকার মতো।
নিরাশ গলায় সাইদ বললেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। কেউ খোঁজ নেয় না। এখান থেকে বের হওয়ার কোন আশা দেখিনা।’
কবরস্থানের আরেক বাসিন্দা সায়েদ আল-আরাবি। তিনি পেশায় মুচি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ সায়েদ জানালেন তার চেয়ে যারা আরেকটু বেশি আয় করেন তারাও এখন আর কায়রোতে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নিতে পারছেন না। দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তবে নিজেকে নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা নেই তার।
বললেন, ‘আমি সারা জীবন এই কবরস্থানে কাটিয়ে দিলাম। এখানেই সংসার, বাচ্চারাও এখানেই বড় হল। এখানেই মারা যাবো।’
স্থানীয় মিডিয়ায় প্রায়ই বলা হয়, এসব কবরস্থান অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ীদের গোপন আবাস। এমন প্রচারণা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
কবরস্থানে বসবাসরত ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব মানুষের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছেন এনজিও কর্মী মেধাত। তার দাবি, ‘সরকার যুগের পর যুগ ধরে এদের জন্য কিছুই করছে না। মনে হচ্ছে এদের কথা ভুলেই গেছে।’
অবশ্য সরকারের প্রতিনিধি খালেদ মোস্তফা জানিয়েছেন, ‘এসব বস্তি ও কবর এলাকায় বাসকারী মানুষদের বিষয়টি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।’
Leave a reply