দেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি চারজনের একজন উচ্চ রক্তচাপ এবং ১০ জনের একজন ডায়াবেটিসে ভুগছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই দুই রোগেই নারী-পুরুষ আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বগামী।
তবে প্রায় ৬০ ভাগ নারী-পুরুষই এই রোগ সম্পর্কে অসচেতন। ২০১১ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে এই রোগ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) ট্রাকশন মিলনায়তনে ‘বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ প্রিলিমিনারি ফাইন্ডিংস হাইপারটেনশন অ্যান্ড ডায়াবেটিস’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
ইউএসএআইডি, ডাটা ফর ইমপ্যাক্ট, আইসিএফ, আইসিডিডিআর,বি এবং নিপোর্ট যৌথভাবে জরিপ পরিচালনা করে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাটা ফর ইমপ্যাক্টের সুস্মিতা খান এবং আইসিডিডিআর,বি’র ডা. আফরিন ইকবাল।
জরিপ কার্যক্রম এলাকায় প্রতি ৩টি বাড়ির পর চতুর্থ বাড়ি গিয়ে ১৮ বয়সের বেশি বয়স্কদের রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়। এতে ৭ হাজার ৪২৯ জন নারী ও ৫ হাজার ৭০০ পুরুষের রক্তচাপ এবং ৬ হাজার ৯৯৭ জন নারী ও ৫ হাজার ২৯৯ জন পুরুষের রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়।
এদের মধ্যে পূর্ণবয়স্কদের ২৮ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আর ১৮ বছরের বেশি নারীর সংখ্যা ২৮ শতাংশ এবং পুরুষ ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের ১৩ শতাংশ এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৩৯ শতাংশ আক্রান্ত। অর্থাৎ বয়সের সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
নারীদের মধ্যে ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের ১৩ শতাংশ ও ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৪৫ শতাংশ আক্রান্ত। পুরুষের মধ্যে ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের ১৩ শতাংশ ও ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৩৪ শতাংশ এ রোগে ভুগছেন। জরিপে দেখা গেছে, গ্রামের চেয়ে শহরের লোক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আবার নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
১৮ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে শহরে ২৯ শতাংশ ও গ্রামে ২৮ শতাংশ এবং পুরুষের মধ্যে শহরে ২৮ শতাংশ এবং গ্রামে ২৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এছাড়া ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে শহরে ৪৮ শতাংশ ও গ্রামে ৪৩ শতাংশ এবং পুরুষের মধ্যে শহরে ৩৮ শতাংশ এবং গ্রামে ৩৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
জরিপে বলা হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে নারীদের ৫১ শতাংশই অসচেতন। ৬ শতাংশ সচেতন; কিন্তু এরা ওষুধ খায় না। ২৮ শতাংশ ওষুধ খায়; কিন্তু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রেণে নেই। আর ১৫ শতাংশ ওষুধ খায় এবং তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে।
পুরুষদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই অসচেতন। ৫ শতাংশ সচেতন; কিন্তু এরা ওষুধ খায় না। ২০ শতাংশ ওষুধ খায়; কিন্তু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। আর ৯ শতাংশ ওষুধ খায় এবং তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে।
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ হাজার ৯৯৭ জন নারী ও ৫ হাজার ২৯৯ জন পুরুষের রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়। তাতে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে ১০ শতাংশ, ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক নারী ১০ শতাংশ এবং পুরুষের মধ্যে ১১ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছেন।
এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ৫ শতাংশ এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের ১৪ শতাংশ আক্রান্ত। অর্থাৎ বয়সের সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। নারীদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ৫ শতাংশ ও ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের ১৪ শতাংশ আক্রান্ত। পুরুষের উভয় বয়সেই একই চিত্র।
জরিপে দেখা গেছে, গ্রামে বসবাসকারীদের তুলনায় শহরের লোক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে আবার নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। দেখা গেছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে শহরে ১৪ শতাংশ ও গ্রামে ৮ শতাংশ এবং পুরুষের মধ্যে শহরে ১৩ শতাংশ এবং গ্রামে ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন।
এর মধ্যে চিকন শরীরের ৬, স্বাভাবিক ৮ এবং অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন ১৫ শতাংশ নারী ডায়াবেটিসে ভুগছেন। অন্যদিকে চিকন শরীরের ৬, স্বাভাবিক ১০ এবং অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন ১৮ শতাংশ পুরুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
জরিপে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস সম্পর্কে নারীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই অসচেতন। ৩ শতাংশ সচেতন; কিন্তু তারা ওষুধ খায় না। ২৫ শতাংশ ওষুধ খায়; কিন্তু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রেণে নেই।
আর ১৩ শতাংশ ওষুধ খায় এবং তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে। এক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে ৬১ শতাংশই অসচেতন। ৪ শতাংশ সচেতন; কিন্তু ওষুধ খায় না। ২২ শতাংশ ওষুধ খায়; কিন্তু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রেণে নেই। ১৩ শতাংশ ওষুধ খায় এবং তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে।
Leave a reply