করোনা নাকি নতুন কিছু নয়! আগেই এর সম্পর্কে পূর্বানুমান করে গিয়েছিলেন অনেকে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ১৯৮১ সালে প্রকাশিত মার্কিন উপন্যাসিক ডিন কুনৎজের উপন্যাস ‘দ্য আইজ অব ডার্কনেস’র কথা। সেখানে তিনি চীনের উহান-৪০০ নামে একটি ভাইরাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন। করোনাভাইরাসের কথাই কি বলেছিলেন কুনৎজ? প্রচুর মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বইটির ছবি ও কথা শেয়ার করছেন ।
আলোচিত সেই উপন্যাসে উহানের পাশেই একটি ল্যাবে উহান-৪০০ ভাইরাসের জীবাণু তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। এটি জৈব অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছিল। সেই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার শতভাগ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ভাইরাসটি মস্তিষ্কের কোষগুলোকে নষ্ট করে ফেলবে। এতে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারাবে। একসময় শ্বাস নিতে না পেরে মারা যাবে মানুষ। অনেকেই বলছেন করোনাভাইরাসের কথা বুঝি বলেছিলেন কুনৎজ।
তবে, উপন্যাসের উহান-৪০০ ও করোনাভাইরাসের পার্থক্য খুঁজে বের করেছে রয়টার্সের ফ্যাক্টচেক টিম। উপন্যাসে বর্ণিত ভাইরাসটির সাথে করোনার বিস্তর ফারাক। করোনায় মৃত্যুর হার সেই উহান-৪০০ ভাইরাসের চেয়ে অনেক কম। মোটের ওপর ৩ শতাংশের কিছু বেশি। তাছাড়া, করোনাভাইরাস মস্তিষ্কে আঘাত করে না, আঘাত করে ফুসফুসে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, যে উহান-৪০০ ভাইরাস নিয়ে এত কথা, সেটির নাম ছিল আদতে গোর্কি-৪০০। ১৯৮৯ সালের আগ পর্যন্ত সংস্করণগুলোতে সেটিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের জৈব অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতন ঘটার সাথে সাথে অবসান ঘটতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েতের স্নায়ু যুদ্ধের। এরপর বইটির বাজার চিন্তা করে পরবর্তীতে সোভিয়েতের বদলে চীনকে এবং গোর্কি-৪০০’র বদলে উহান-৪০০ ভাইরাস অন্তর্ভুক্ত করে মার্কিন প্রকাশনী সংস্থা।
সুতরাং চীনের মরণঘাতী ভাইরাস বিষয়ে লেখক যে খুব সচেতনভাবে কিছু লেখেছিলেন সেটি বলার উপায় নেই। বরং সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গল্প-উপন্যাস-সিনেমায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি যে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব দেখা যেতো সেটিই ঘটেছে উপন্যাসটিতে। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৈতিক ও রাজনৈতিক শক্র হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে চীন। ফলে মার্কিন পাঠকদের কথা চিন্তা করেই গোর্কি-৪০০ হয়ে যায় উহান-৪০০। এর সাথে করোনাভাইরাসের সংযোগ নেই বললেই চলে।
Leave a reply