করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাইলেও আপাতত ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। বুধবার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত বরাদ্দপত্রে বলা হয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত হতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অনুকূলে সচিবালয় অংশে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলো। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুকূলে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।
৫০ কোটি টাকার মধ্যে কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা যাবে সেটাও বলে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ বাবদ ব্যয় করতে হবে ৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। জনসচেতনায় প্রকাশনা কাজে ব্যয় করতে হবে ১ কোটি ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া কেমিক্যাল-রি-এজেন্ট খাতে ব্যয় করতে হবে ২ কোটি ৫০ হাজার টাকা।
বরাদ্দকৃত এ অর্থ ব্যয়ে কিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রোকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং পাবলিক প্রোকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় সরকারি আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ অর্থ প্রস্তাবিত খাত (করোনা ভাইরাস ‘কোভিড-১৯’) ব্যতীত অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না।
এ অর্থ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের সংশ্লিষ্ট খাতে সমন্বয় করতে হবে। এ খাতে অর্থ অন্য খাতে পুনঃউপযোজন বা স্থানান্তর করা যাবে না। অব্যয়িত অর্থ (যদি থাকে) ৩০ জুন ২০২০ তারিখের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এছাড়া অর্থ ব্যয়ের ১০ দিনের মধ্যে কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তার বিস্তারিত অর্থ বিভাগকে জানাতে হবে।
এ অর্থ পুনঃউপযোজনের পর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ‘সাধারণ থোক বরাদ্দ’ খাতের বরাদ্দ শূন্য হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা ছাড় করা হলো। প্রয়োজন সাপেক্ষে পরবর্তীতে আরও অর্থ ছাড় করা হবে।’
এর আগে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত ৫ মার্চ ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘কোভিড-১৯’ এর চিকিৎসার নিমিত্তে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা/উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
‘কোভিড-১৯’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়। এ জন্য সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু, সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা (সাপোর্ট কেয়ার), করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট (সরঞ্জাম) এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা বা জেনারেল হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন/সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবালয় অংশে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।’
‘এ অবস্থায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ‘কোভিড-১৯’ এ আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন বা সম্প্রসারণের জন্য অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিক খাত থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো,’- বলা হয় চিঠিতে।
Leave a reply