মাস্ক না পরায় নড়াইলে এক চাকরিজীবীকে পুলিশ পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৬ মার্চ সকাল ৯টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি শনিবার জানাজানি হয়। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী তরিকুল ইসলামকে (৩৫) নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তরিকুল শেখহাটি গ্রামের অলিয়ার রহমান সরদারের ছেলে।
ভূক্তভোগী তরিকুল জানান, তিনি ঢাকার উত্তরায় একটি কোম্পানির রিজিওন্যাল ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে গত ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসেন তিনি। পরেরদিন সকালে বাড়ির পাশে শেখহাটি বাজারে বের হন। তবে তরিকুল মাস্ক নিতে ভুলে যান। এ সময় সাদা পোশাকে শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এনামুল হক ভূক্তভোগী তরিকুলের কাছে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চান।
তরিকুল পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান, তিনি বাড়ি থেকে মাস্ক আনতে ভুলে গেছেন। তবুও তরিকুলকে জেরা করেন এসআই এনামুল হক। এক পর্যায়ে এনামুলসহ তার সাথে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরা তরিকুলকে টেনে-হিঁচড়ে, কিল-ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। পুলিশের মারপিটে তরিকুল হাত, পা, মুখ, মাথা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। এ দৃশ্য দেখে বাজারের লোকজন এগিয়ে আসলেও তরিকুলকে পুলিশ সদস্যরা মারধর করতে থাকেন। পরে তাকে শেখহাটি ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং টাকার বিনিময়ে তরিকুলকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন এসআই এনামুল হক। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ঘটনার দিন দুপুরে তরিকুলকে হাতকড়া পরিয়ে নসিমনে করে সদর থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। সদর থানার ওসি বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন।
এরপর তরিকুলকে নিয়ে সদর হাসপাতালে আসলেও চিকিৎসাসেবা নিতে বাঁধা দেন শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলমগীরসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা। এক পর্যায়ে তরিকুলকে হাসপাতাল থেকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া। বাড়িতে যাওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে তরিকুলকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে শেখাটি বাজার কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম সরদার বলেন, ৬ থেকে ৭ জন পুলিশ মানিকের মাস্ক না থাকার অভিযোগে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বেধড়ক মারপিট করে। আমরা বাজার কমিটির লোকজন পুলিশের হাত-পা ধরলেও তারা কোনো কথা শোনেনি।
এদিকে অভিযুক্ত শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এনামুল হক বলেন, তরিকুলের মাস্ক পরা ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পুলিশের সাথে খারাপ আচরণ করেন। তবে তরিকুলকে মারধর করে টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন পুলিশ কর্মকর্তা এনামুল হক।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জেনেছি। বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
Leave a reply