খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। চলছে জেলাগুলোতে অঘোষিত লকডাউন। অবরুদ্ধ জনপদ। বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন। এর বাইরে নয় পাহাড়ও। টানা বন্ধে আর্থিক সংকটে পড়েছে এখানকার ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবীরা। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে এর প্রভাব পড়েছে বেশ। একদিকে যেমন বন্ধ এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য তেমনি বন্ধ রয়েছে জেলার সব ধরণের দোকানপাট। ঘুরছেনা যানবাহনের চাকা। আর এর সাথে সাথে থমকে গেছে এসবের সাথে জড়িতরা। যাদের স্বাভাবিক দিনযাপনসহ দৈনিন্দন সংসার চলতো ব্যবসা আর যানবাহন দিয়ে সেই তারাই এখন নিয়মিত ঘর বন্দি।
দরিদ্রদের মত না হলেও অনেকটা টেনে টুনে পেট বা সংসার চললেও আর্থিক টানা পোড়েনে পড়েছেন ঘরবন্দি মানুষগুলো। কেউ কেউ চলমান পরিস্থিতিতে কিভাবে সংসার বা পরিবার সামলাবেন তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন। অসহায়রা ইতিমধ্যে ত্রাণ সহায়তার আওতায় আসলেও ছোট-খাটো ব্যবসায়ীরাও খুঁজছেন বিকল্প পথ। টানা বন্ধে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা না থাকলেও পাড়া-মহল্লার দোকানীরা টুকটাক দোকান খোলা রাখলেও সেখানে বেচা বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক দৈন্যতায় পড়ে গেছেন তারা।
এমন একজন পাড়া দোকানী জসিম উদ্দীন। তার সাথে কথা হলে সে জানায়, সংসারে স্বামী স্ত্রীসহ পরিবারে তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। এলাকায় একটি ছোট মুদি দোকানের আয় দিয়েই চলতো জসিমের এই সংসার। লকডাউনের প্রথমদিকে দোকানে টুকটুাক বেচা বিক্রি হলেও এখন তা বন্ধের পথে। মাস শেষ নতুন আরোও একটি মাস চলছে। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল যোগ হয়েছে। অথচ ব্যবসা বন্ধ। এরমধ্যে সংসারের খরচতো থেমে নেই। জমানো টাকাও নাই যে, জরুরী প্রয়োজনে তা খরচ করবেন। অনেকটা আক্ষেপ করে জসিম আরোও বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণও নিতে পারবোনা।
শহরের প্রধান সড়কের পাশেই গফুর কুলিং কর্ণার। অন্যান্যদিনে জমজমাট থাকতো এই কুলিং কর্ণার। কিন্তু অঘোষিত লক ডাউনের পর থেকে দোকানের সাটার পড়ে আছে। দিনের কোন সময়েই খোলা হচ্ছেনা এ প্রতিষ্ঠান।
কুলিং কর্ণারের মালিক মো. গফুরের সাথে কথা বলতেই এক ধরণের চিন্তার ছাপ দেখা দেয় তার চেহারায়। বলেন, এ দোকান দিয়েই চলে তাদের যৌথ পরিবারের সংসার। করোনা পরিস্থিতির প্রথমদিকে তেমন একটা চিন্তা না করলেও টানা বন্ধে তা ভাবনায় ফেলে দিয়েছে তাকে। শুরুতে কয়েকদিনের বাজার সদাই করে রেখে দিলেও এখন তা শেষের দিকে। একদিকে কখন খোলা হবে তার দোকান তা যেমন জানেননা অপরদিকে, সংসার খরচ কিভাবে মেটাবেন তা নিয়েও যথেস্ট সংশয়ে রয়েছেন কুলিং কর্ণারের মালিক মো. গফুর।
কথা হয় জেলা শহরের পুরোনো ডায়গনোস্টিক সেন্টার “চাঁদনী” এর পরিচালক ও তরুণ উদ্যেক্তা ইসমাইল হোসেন বাপ্পীর সাথে। করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৪ জন কর্মচারী রয়েছে। তাছাড়াও এ প্রতিষ্ঠান দিয়ে চলে তাদের পুরো সংসার। অঘোষিত লকডাউনের কারণে সে প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ রয়েছে। ব্যবসা বন্ধ থাকলেও কর্মচারীদের বেতনতো দিতে হবে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নিয়মিত খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। যার কারণ, চাঁদনী ডায়গণোস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন যে পরিমাণ আয় হতো সেখান থেকে কর্মচারীদের বেতনের পাশাপাশি মালিকের সংসার চলতো। এখনতো উভয়ের সংকট চলছে। এদিকে, প্রতিষ্ঠানের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল জমে গেছে।
অপরদিকে, খাগড়াছড়ির পর্যটন সংশ্লিষ্ট আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী তারেক আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে তাদের হোটেল বন্ধ। কারণ পর্যটক নাই। লকডাউনের আগে থেকেই হোটেলের সব বুকিং বাতিল করেছে জেলায় আগত পর্যটকরা। এছাড়া নাই কোন স্থানীয় বোর্ডারও। সে থেকেই ধীরে ধীরে হোটেল বন্ধ হয়ে আছে। এতে দিনের পর দিন আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছেন তিনি। কখন নাগাদ এ সংকট কাটিয়ে উঠবেন তা নিয়েও বেশ চিন্তিত হোটেলের এ মালিক।
পাহাড়ের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ‘সাজেক’। এখানকার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী যুবরাজ জানান, একমাত্র পর্যটকদের নিয়েই চলে ওখানকার হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। এখনতো সব বন্ধ। পর্যটক নেইতো আয় রোজগারও নেই। এরসাথে জড়িত সবাই অর্থনৈতিক লোকসানে আছে। কারো কারো ব্যাংক লোন ও আত্মীয় স্বজন থেকে ধার করে সাজেকে বিনিয়োগ করেছে। তাদের অবস্থা আরোও করুণ।
এছাড়া সাজেকের সাথে জড়িত সিএনজি, চাঁদের গাড়ি ও পিকআপ। এসব যানবাহনের মালিক, চালক ও হেলপারেরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানছেন এবং সচেতন হচ্ছেন তাতেও বেশ আনন্দিত এ ব্যবসায়ী।
এদিকে, জ্বালানী তেলের ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, সড়কে যানবাহনই নাই কাদের কাছে তেল বিক্রি করবো? ব্যবসাতো নাই। কর্মচারী মালিক বসে বসে খাচ্ছি। এভাবে চললে কিভাবে ব্যাংক লোন পরিষদ করবো তাও জানেননা তিনি।
Leave a reply