আজ মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন

|

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন যার অভিনয় শুরুটা ষাটের দশকে। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এ মহানায়িকা।

তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ষাটের দশকে উত্তম কুমারের সাথে জুটি বেঁধে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। রূপালি পর্দার উত্তম-সুচিত্রা জুটি দর্শক মনে আজও তুমুল জনপ্রিয়।

আজ এ মহানায়িকার ৮৯তম জন্মদিন। বাংলাদেশের পাবনায় ১৯২৯ সালের ৬ এপ্রিল এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুচিত্রা সেন।

নায়িকা হওয়ার আগে সুচিত্রা সেনের নাম ছিলো রমা দাশগুপ্ত। তার বাবার নাম করুণাময় দাশগুপ্ত, ছিলেন স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা।

নায়িকা হয়ে পাবনার রমার নাম বদলে সুচিত্রা। পরে তার হাত ধরেই বদলে যায় বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকার সংজ্ঞা। ‘সাত নম্বর কয়েদী’ ছবিতে অভিনয় করার পর সুচিত্রা সেন পিনাকী মুখার্জি পরিচালিত ‘সংকেত’ ছবিতে অভিনয় করেন। তখনও তিনি ‘সুচিত্রা সেন’ নাম ধারণ করেননি। সে নাম আসে এর পরের ছবি অর্থাৎ নীরেন লাহিড়ীর ‘কাজরী’ ছবির মাধ্যমে ১৯৫২ সালে।

১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন।

১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে তাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়।

১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী। আবার ভারতের অভিনেত্রী রাইমা সেন, এ মহানায়িকার নাতনী।

১৯৫২ সালে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হন। সুচিত্রা সেনের প্রথম ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫২ সালে শেষ কোথায়’ ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়।

সুচিত্রা উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য লাভ করে এবং উত্তম-সুচিত্রা জুটি একের পর এক হিট ছবি উপহার দিতে থাকেন তারা। বাংলা ছবির এই অবিসংবাদিত জুটি পরবর্তী ২০ বছরে ছিলেন আইকন স্বরূপ। উত্তম-সুচিত্রা শব্দটি ছিলো তখনকার চলচ্চিত্রের আশির্বাদ।

১৯৫৫ সালের ‘দেবদাস’ ছবির জন্য সুচিত্রা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। উত্তম কুমারের সাথে বাংলা ছবিতে রোমান্টিকতা সৃষ্টি করার জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী।

১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তার অভিনীত সবকটি ছবিই ব্যবসা সফল। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে গেছেন।

সুচিত্রা সেন অভিনীত শেষ ছবি ‘প্রণয় পাশা’ মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। ওই বছরই তিনি সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে চিরতরে অবসরগ্রহণ করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন।

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ কিংবদন্তি শিল্পীর মৃত্যু হয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply