সাবান বনাম স্যানিটাইজার। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোনটি বেশি কার্যকর?
গলি থেকে রাজপথ, অনেকেই তর্ক জুড়েছেন। চাহিদায় এগিয়ে স্যানিটাইজার। পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে বহুজাতিক বিপণি, সর্বত্রই স্যানিটাইজারের জন্য হাহাকার। চাহিদার নিরিখে সাবান অনেকটাই ব্যাকফুটে। যদিও ডাক্তাররা সাবানকেই বেশি নম্বর দিচ্ছেন।
ডাক্তারদের মতে, কোভিড-১৯ ঠেকাতে স্যানিটাইজারের থেকে সাবান বেশি কার্যকর! কারণ?
প্রধানত তিনটি উপাদানে গঠিত এই করোনাভাইরাস। সবচেয়ে বাইরের অংশে থাকে গ্লাইকোপ্রোটিনের কাঁটা, যেগুলোর সাহায্যে ভাইরাসটা জীবন্ত কোষে আটকে গিয়ে সংক্রামিত হয়। দ্বিতীয় উপাদানটা হল, রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ। যখন কোনও জীবন্ত কোষের ভিতরে ভাইরাসটি ঢোকে, তখন সে বংশবিস্তার করে আরএনএ-র প্রতিলিপি তৈরির মাধ্যমে। তৃতীয় উপাদানটি একটি লিপিড স্তর, যা ভাইরাসের অন্যান্য অংশকে ধরে রাখে। এই লিপিড স্তর ভাঙতে পারলে ভাইরাসটাকে মারা সম্ভব। এমনটাই জানালেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক লাহিড়ী।
ডা. কৌশিক লাহিড়ীর পর্যবেক্ষণ, সাবানের আণবিক গঠন দেখলে বোঝা যায় যে, এদের দুটো অংশ। হাইড্রোফিলিক ও হাইড্রোফোবিক। হাইড্রোফিলিক অংশের পানির অণুর প্রতি আকর্ষণ প্রবল। অন্যদিকে, হাইড্রোফোবিক অংশের পানি একেবারেই নাপছন্দ।
গবেষণা বলছে, সাবান জল দিয়ে হাত ধুলে ভাইরাসের লিপিড স্তরের প্রতি পানিতে গোলা সাবানের অণুর হাইড্রোফোবিক অংশের আকর্ষণ প্রবল হয়। অন্য দিকে পানির অণু সাবানের অণুর হাইড্রোফিলিক অংশকে আকর্ষণ করে। এই টানাপোড়েনে ভাইরাসের লিপিড স্তর যায় ভেঙে। ফলে ভাইরাসটা নিষ্ক্রিয় হয়ে মারা যায়।
একই বক্তব্য কলকাতার ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর ডিরেক্টর ও প্রোফেসর ডা. মধুমিতা দুবের। তাঁর মতে, “স্বাস্থ্য পরিষেবায় নিযুক্ত ডাক্তার বা নার্সের পক্ষে বারবার উঠে গিয়ে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া সম্ভব হয় নয়। এদের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজারের ব্যবহার অনেক বেশি সুবিধাজনক। তবে যাঁরা বাড়িতে আছেন তাঁরা বারবার সাবান আর পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।”
গবেষণা বলছে, স্যানিটাইজারের মূল উপাদান অ্যালকোহল। যা করোনাভাইরাসের লিপিড স্তর ভেঙে ফেলতে সক্ষম। কিন্তু সাবানের মতো ভাইরাসের লিপিড স্তরের সঙ্গে অ্যালকোহলের দ্রুত বন্ধন গঠন হয় না। ফলে স্যানিটাইজার ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে অনেক বেশি সময় নেয়। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের থেকে সাবান ভাইরাস নষ্ট করতে বেশি কার্যকর। সাবান ও পানি ব্যবহারের সুযোগ না থাকলে তখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিকল্প হতে পারে।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
Leave a reply