উন্নত বিশ্ব ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থ হলেও, লকডাউন ছাড়াই করোনা মোকাবেলায় রীতিমতো চমক দেখিয়েছে তাইওয়ান। বলা হচ্ছে, সার্স মহামারির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল চীনের প্রতিবেশী দেশটি। দেড় যুগের ব্যবধানে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা খাত গড়ে তোলার কৃতিত্ব তো আছেই; নাগরিকদের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ আরও সহজ করেছে করোনা মোকাবেলা।
২৫ জানুয়ারি চীনের বাইরে দুটি দেশে চারজন করে রোগী শনাক্ত হয়, তাইওয়ান আর অস্ট্রেলিয়ায়। ১০ সপ্তাহের ব্যবধানে, ৪ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়ায়; তখন তাইওয়ানে এ সংখ্যা সাড়ে ৩শ’ও নয় ।
অস্ট্রেলিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই যখন করোনার বিস্তার ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন উল্টোচিত্র তাইওয়ানে। বলা হচ্ছে, ২০০৩ সালে সার্স মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল দেশটি। সংক্রমণ ঠেকাতে সঠিক সময়ে নিয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা।
রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক ড. স্টিভ কুও বলেন, “সার্স মহামারির পরই নতুন আইন পাস হয় তাইওয়ানে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী তখন থেকেই সব হাসপাতালকে কমপক্ষে ৩০ দিনের জন্য সব ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হয়।”
জানুয়ারিতে প্রতিবেশী চীন যখন ছোঁয়াচে নতুন ভাইরাসের খবর জানায়, তখনই, আগাম ঝুঁকি টের পায় তাইপে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে বিমানবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। ভ্রমণ ইতিহাস ঘেটে ছোঁয়াচে ভাইরাসবাহক যাত্রীদের সহজে শনাক্ত করতে, ইমিগ্রেশন রেকর্ডে যোগ হয় ইলেকট্রনিক পেশেন্ট ফাইল।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ড. জ্যাসন ওয়াং বলেন, “বিমানবন্দরে দ্রুততম সময়ে বিপুলসংখ্যক যাত্রীর স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে তাইপে। সেখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতেও ব্যক্তিগতভাবে তাদের খোঁজখবর নেয়া হয় নিয়ম করে, যেন কেউ অসুস্থ হলে সাথে সাথে তাকে আলাদা করে ফেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।”
নিজ দায়িত্বে নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়ে তাদের নিয়মিত খাবার ও অন্যান্য নিত্যপণ্য সরবরাহ করছে প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের সরকার। পুলিশের তরফ থেকে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে, মানুষের খবর নেয়া হচ্ছে নিয়মিত।
Leave a reply