পাহাড়ঘেরা বাড়ি থেকে শহরের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। যদিও ঘুরা পথে শহরে পৌঁছাতে চলতে হয় ১৫ কিলোমিটারের মতো পথ। পাহাড়ি এলাকায় কোনো স্কুল কলেজ নেই। সন্তানদের পড়াশোনা করানো জন্য পাঠাতে হয় শহরের আবাসিক স্কুলে। প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে আসে তারা।
জলন্দার নায়েকের তিন বাচ্চা ছেলে শহরের স্কুলে পড়ে। কিন্তু ছুটির দিনে দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে আসার জন্য নেই কোনো পথ। ৫টি পাহাড়ের কিনার ঘেষে জঙ্গলের ডালপালা ভেঙে তবেই বাবা-মায়ের সানিধ্য পেতে হয় তিন ভাইকে। সন্তানদের এমন কষ্ট সইতে পারেন না বাবা। আবার স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করা যাবে না। এখন কী করা? কিভাবে তাদের যাতায়াতের কষ্ট কমানো যায়?
চিন্তা ভাবনা করে জলান্দর নেমে পড়লেন শাবল-খুন্তি নিয়ে। শহর বরাবর সোজা রাস্তা বানাবেন তিনি! হ্যাঁ, পাহাড় কেটেই বানাতে হবে এই রাস্তা। সরকারি লোকজনের কাছে ধর্ণা দিয়ে লাভ হয়নি। তাই নিজেই কাঁধে তুলে নিলেন রাস্তা বানানোর দায়িত্ব।
গত দুই বছর প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে পাহাড় কেটে ৮ কিলোমিটার পথ বানিয়েছেন ভারতের ওড়িষ্যা রাজ্যের এই বাসিন্দা। তার এই দুঃসাহসিক অভিযানের কথা জানতে পারেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। নিজের পত্রিকায় খবর প্রকাশ করেন নতুন এই ‘দশরথ মাঝি’কে নিয়ে। তারপরই প্রশাসনের টনক নড়ে। এখন অবশিষ্ট রাস্তাসহ পুরোটাই নতুন করে নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার।
আর ঘোষণা দেয়া হয়েছে, গত দুই বছর কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জলন্দারকে তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেয়া হবে। সরকার অবশেষে সাড়া দেয়ায় খুশি জলান্দর। বিবিসিকে বলেছেন, তিনি আশা করছেন তার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হবে।
এ ঘটনা নিয়ে প্রথম রিপোর্ট করা সাংবাদিক শিবশক্তি বিসওয়াল বলেন, এত বড় কাজ করলেও একটি গাছও কাটেননি তিনি। এটা আমাকে অবাক করেছে। ভারতের মিডিয়া জলান্দরকে বিহারের দশরথ মাঝির সাথে তুলনা করছে। যিনি তার এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেছিলেন। বলিউড সিনেমা ‘মাঝি- দ্য মাউন্টেইন ম্যান’ দশরথের কাহিনী নিয়ে নির্মিত।
/কিউ
Leave a reply