করোনা মহামারী নিয়ে চীন সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তীব্র সমালোচনা করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সমালোচনার মুখে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাস বলেছেন, করোনা মোকাবেলার জন্য বিশ্ব যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। তার মতে, করোনা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নয়, বিশ্ব নেতাদের ব্যর্থতাই দায়ী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস আরও দু’বার আসবে এবং তা মোকাবেলা করতে বিশ্বাবাসীকে প্রস্তুত থাকতেও বলেছে ডব্লিউএইচও। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে আরও অন্তত দেড় থেকে দুই বছর সক্রিয় থাকতে পারে।
ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাসের দাবি, এ ভাইরাসকে যখন তারা মহামারী ঘোষণা করেছিল তখন এটি ঠেকাতে চীন ছাড়া বিশ্বের বাকি দেশগুলো যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। ওই সময় চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮২ এবং কোনো মৃত্যু ছিল না। অথচ ৩ মাসের ব্যবধানে সারা বিশ্বে ৩৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং ২ লাখ ছাড়িয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা।
ট্রাম্প বলেছেন, মহামারীর তীব্রতা আমলে নেয়নি ডব্লিউএইচও। তাদের বিরুদ্ধে চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন তিনি। এ ব্যাপারে তেদ্রোস বলেন, মহামারী ঘোষণার আগে তারা ভাইরাস সম্পর্কে আরও জানতে চীনে গিয়েছিলেন। করোনার উৎস খুঁজতে চেয়েছিলেন। করোনা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে বিশ্ব নেতারাই দায়ী।
এদিকে ইউরোপের ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেছেন, করোনা খুব দ্রুত পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না। বরং পুনরায় নতুন রূপে ফিরে আসবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে যে স্বাস্থ্য পদ্ধতি অনুসরণ করছে তা তেমন কোনো কাজে আসবে না। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারের মতো করোনার ধাক্কা সামাল দিতে হতে পারে।
আরও দেড়-দুই বছর থাকবে করোনা : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে আরও অন্তত দেড় থেকে দুই বছর সক্রিয় থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা। বিশ্বের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ এতে সংক্রমিত হয়ে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের পরেই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি অকার্যকর হতে শুরু করবে। আগের মহামারীগুলো নিয়ে হওয়া গবেষণার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ অ্যান্ড রিসার্চ পলিসি (সিআইডিআরআইপি) নতুন করোনাভাইরাসের স্থায়িত্বকাল নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে যে তিনটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে, তার কোনোটিতেই করোনাভাইরাস স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘মুছে যেতে পারে’ এমন আশাবাদ মেলেনি।
সিআইডিআরআইপি যেদিন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের উহানের ল্যাব থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে এমন ‘প্রমাণ দেখেছেন’ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে এক ট্রিলিয়ন ডলারের মতো ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন।
সিআইডিআরআইপির প্রতিবেদনে দেয়া তিনটি সম্ভাব্য চিত্রের প্রথমটিতে সংক্রমণের ধারাবাহিক ‘উত্থান, পতনের’ ভেতর দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে করোনাভাইরাস ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে। এ উত্থান-পতন অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে। এটি নির্ভর করবে সংক্রমণ মোকাবেলায় নেয়া বিধিনিষেধের ধরন ও তা কীভাবে তুলে নেয়া হচ্ছে তার ওপর।
Leave a reply