ক্ষুধার্ত সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে পাথর রান্না!

|

করোনারভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে উপার্জন। ঘরে খাবার নেই। মাকে ঘিরে ধরে কাঁদছে ছোট ছোট আট ৮ সন্তান। ক্ষুধার্ত সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে পাতিলে পাথর বসিয়ে রান্নার ভান করছেন অসহায় মা! এই আশায় যে, বাচ্চারা খাবারের অপেক্ষা করতে করতে এক সময় হয়তো ঘুমিয়ে পড়বে। এমনি এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল আফ্রিকার দরিদ্র দেশ কেনিয়ায়। মোম্বাসা এলাকায় ওই নারীর এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে শুক্রবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

রান্না বসানো ওই মায়ের নাম পেনিনা বাহাতি কিতসাও। তিনি বিধবা। আট সন্তানের জননী। স্বামীকে হারিয়ে স্থানীয় একটি লন্ড্রিতে কাজ নেন অক্ষরজ্ঞানহীন কিতসাও। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকারি বিধিনিষেধে কাজটি হাতছাড়া হয়ে গেছে তার। ফলে ঘরে খাবার নেই। কিন্তু পেট তো আর লকডাউন মানে না। ক্ষুধার জ্বালায় কোনোভাবেই থামছিল না শিশুদের কান্না। উপায় না পেয়ে পাতিলে পাথর রেখে চুলোয় আগুন ধরিয়ে বাচ্চাদের ধোঁকা দেয়ার পথ বেছে নেন মা। হৃদয়বিদারক ঘটনাটি নজরে পড়ে প্রতিবেশী প্রিসকা মোমানির। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে জানান তিনি। কেনিয়ার এনডিটিভিতে এ নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ওই মাকে সাহায্যের শেষ নেই মানুষজনের। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে এবং ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয় তার। পরে এর মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পান তিনি। সহায়-সম্বলহীন কিতসাও দুটি বেডরুমের যে বাড়িতে থাকেন সেখানে নেই পানি বা বিদ্যুতের সংযোগ। মানুষের উদারতায় মুগ্ধ তিনি।

সাহায্য পেয়ে কিতসাও বলেন, আমি বিশ্বাস করতাম না যে, কেনিয়ানদের এত দয়া আছে। সারা দেশ থেকে আমি ফোন পেয়েছি, কিভাবে তারা সাহায্য করতে পারে জানতে চাচ্ছে। এ নারী বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে যখন রান্নার অভিনয় করছিলাম তখন আমার সন্তানরা বলছিল, তুমি মিথ্যা বলছো। আমি বলতে পারিনি যে, আমার কিছুই করার নেই।

করোনার প্রাদুর্ভাবে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে সহায়তা দিয়েছে কেনিয়ার সরকার। তবে এই নারীর ঘর পর্যন্ত তা পৌঁছেনি। গত বছর সন্ত্রাসীদের হাতে তার স্বামী নিহত হন। এরপর থেকেই আট সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন তিনি। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৪১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২১ জন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply