শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

|

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার সময় স্বামীর চাকরিসূত্রে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। স্বামী-সন্তানের পাশাপাশি ছোট বোন শেখ রেহানাও সেসময় তার সঙ্গে অবস্থান করায় বেঁচে যান তারা। এরপর ৬ বছর এদেশে-ওদেশে কাটিয়ে দেন শেখ হাসিনা-ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া দম্পতি। দীর্ঘ নির্বাসন ছেড়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন। এদিন তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ভারতের দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে বিকালে ঢাকায় নামলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষ তাকে স্বাগত জানান।

দিনটি উপলক্ষে প্রতিবছর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু এ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সব ধরনের জনসমাগমপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করে আসছে দলটি। ফলে ঘরে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনায় পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দেশে ফেরার আগেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত দলটির জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে দল পুনরুজ্জীবনের দায়িত্ব দেন নেতাকর্মীরা। পরে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসেন শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালে ওই দিনটি ছিল রোববার। সারা দেশ থেকে আসা লাখো মানুষ সেদিন তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান, ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত মানুষের ঢল নামে।

লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছিলেন, আমার আর হারানোর কিছুই নেই। বাবা-মা, ছোট ভাই রাসেলসহ সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথও মসৃণ ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে তাকে। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কখনও নিজ বাসভবনে, কখনও জনসভায় আবার কখনও তার গাড়িবহরে- ক্ষমতায় যাতে শেখ হাসিনা কোনোভাবে যেতে না পারেন।

আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সর্বোচ্চ ত্যাগও করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে। কিন্তু আন্দোলনের ফসল তাকে ঘরে তুলতে দেয়নি নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী মহল। একানব্বইয়ে জাতীয় নির্বাচনে পরাজয় তারই ফল। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন দাবিতে ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে বিএনপিবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপিয়ে দেন তিনি। এ আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর পরের ইতিহাস সবারই জানা। দেশ ও জনগণের কল্যাণে অভূতপূর্ব অবদান রাখায় দেশের মানুষ ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply