আজ কিংবদন্তী গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে ভারতের বেনারসের এক প্রখ্যাত চিকিৎসকের বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন কণ্ঠসংগীত শিল্পী, সংগীত পরিচালক এবং প্রযোজক। তিনি হিন্দি সংগীত জগতে হেমন্ত কুমার নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি বাংলা, হিন্দি এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন। তিনি রবীন্দ্র সংগীতের একজন বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন। তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়ক বিভাগে দু-বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।
হেমন্ত কলকাতায় ইন্টারমিডিয়েট পাস করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু তিনি সংগীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। ১৯৩৭ থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন।
এরআগে কবি সুভাষের উৎসাহেই ১৯৩৫ সালে প্রথম অল ইন্ডিয়া রেডিওর জন্য গান রেকর্ড করেন হেমন্ত। গানের প্রথম লাইন ছিল, ‘আমার গানেতে এলে নবরূপী চিরন্তনী’। এরপর গানের পথে চলা শুরু। ১৯৩৭ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়ার মালিকানাধীন কলাম্বিয়া লেবেল তাকে দিয়ে রেকর্ড করায় শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে দুটি নন-ফিল্ম গান, ‘জানিতে যদি গো তুমি’ এবং ‘বলো গো বলো মোরে’। এই যে শুরু আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে।
গানের সাথে করেছিলেন ছবি প্রযোজনা। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে হেমন্ত-বেলা প্রোডাকশনস-এর নামে ছবি প্রযোজনার কাজে হাত দেন তিনি। এবং প্রথম ছবিতেই বাজিমাত, মৃণাল সেনের ‘নীল আকাশের নীচে’ (১৯৫৯)। রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক জিতে নেয় এই ছবি।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত বাংলা সংগীত শিল্পী বেলা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া অসংখ্য গানের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গান:
মাগো ভাবনা কেন
পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো, বলো কবে শীতল হবো
ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে
আয় খুকু আয়,আয় খুকু আয়
মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে
ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলোনা, ও বাতাস আঁখি মেলোনা
আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি,আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি
এই রাত তোমার আমার, ঐ চাঁদ তোমার আমার…শুধু দুজনে
মেঘ কালো, আঁধার কালো, আর কলঙ্ক যে কালো
রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে
আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে
আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা,আর কতকাল আমি রব দিশাহারা
বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও,মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে ডেকে নিও
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
কেন দূরে থাকো, শুধু আড়াল রাখো
ওলিরও কথা শুনে বকুল হাসে
ছেলে বেলার গল্প শোনার দিনগুলো
আমিও পথের মত হারিয়ে যাবো
১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই মহান গায়ক মারা যান।
টিবিজেড/
Leave a reply