বাজেট অচলাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটে?

|

বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে সিনেটররা ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার মধ্য রাত থেকে এ সংকট দেখা দেয়।

ব্যয় বরাদ্দ সংক্রান্ত বিলটি বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে ২৩০-১৯৭ ভোটে পার পেলেও শুক্রবার আটকে যায় সিনেটে। সিনেটে ৫১টি আসন নিয়ে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে, বিলটি পাস করাতে দরকার ৬০ ভোট। ফলে ডেমোক্রেটদের কাছে ধর্ণা দিতে হচ্ছে রিপাবলিকানদের।

কিন্তু দেশটিতে ‘ডাকা’ কর্মসূচির আওতায় বৈধভাবে বসবাস করা অনিবন্ধিত তরুণ অভিবাসীদের বিষয়ে স্থায়ী সমাধান না করা অবধি ব্যয় বরাদ্দ বিলে সমর্থন দানে বিরত থাকার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন ডেমোক্রেটরা। ফলে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রমে এক ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “দক্ষিণের বিপদজনক সীমান্তের সামরিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য এটা একেবারেই ভালো কিছু না। কর হ্রাসের সাফল্য খর্ব করতে ‘ডেমরা’ (ডেমোক্রেট) এ অচলাবস্থা চাইছে। ”

আইন পরিষদ, এবং নির্বাহী বিভাগ হোয়াইট হাউজ- কোনো একক পার্টির কাছে নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

এ অচলাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর-এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বেথ অ্যান বোভিনো।

প্রত্যক্ষ প্রভাব

বোভিনো বলেন, “সাত লাখ সরকারি কর্মীর কাছ সরকারের পাওয়া সেবাগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি ওই কর্মীরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।”

তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত তাদের ছুটিতে থাকতে হবে, এবং এ সময়ের জন্য তারা মাইনে পাবেন কিনা এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।” এমনকি ছুটিকালীন সময়ের জন্য মাইনে পেলেও কর্মীদের ‘কর্মক্ষমতা হ্রাস’ পাবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন।

পরোক্ষ প্রভাব

জাতীয় উদ্যান ও জাদুঘরের মতো দর্শনীয় স্থানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। পাসপোর্ট ও ভিসা প্রদানের মতো সেবাগুলো কয়েক দিনের বেশি বন্ধ থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশটির পর্যটন শিল্পের আয়ে, এবং এ খাত সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকায়। বারাক ওবামা’র সময়কালে এ ধরনের সেবাগুলো বন্ধ থাকায় জন অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল।

বিভিন্ন সেবা প্রদানে ২০১৮ সালের জন্য ৪৩ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে ওই সেবাগুলো গ্রহণে জনগণকে নিজের পকেটের টাকা খরচ করতে হবে।

খুচরা কেনাবেচা কমে যেতে পারে। বোভিনো বলেন, “এটা একেবারে ভরপুর ছুটির মৌসুম না হওয়ায় প্রভাবটা কিছুটা কম হবে। কিন্তু ছুটি মৌসুমের কেনাকাটা জানুয়ারি মাস অবধিও চলে।”

কোন কোন সরকারি সেবা চালু থাকবে?

জাতীয় ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত বিষয় যেমন, সামরিক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এবং বিমান চলাচলের মতো সেবাগুলো বাজেট অচলাবস্থার সময়টাতেও চালু থাকবে।

এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় আদালত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কারাগার, হাসপাতালে জরুরি ও ভর্তিকৃত রোগীদের সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন,  ডাক,  কর বিভাগের মতো জরুরি সেবাগুলোও পাওয়া যাবে।

অচলাবস্থা কত চলবে?

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের বাজেট নিয়ে লড়াইয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা নতুন কিছু নয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা’র সময়কালে সিনেটরদের মধ্যে ‘ওবামা কেয়ার’ নিয়ে সৃষ্ট মতানৈক্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় বরাদ্দের বিল আটকে গিয়েছিল, এবং ওই অচলাবস্থা ১৬ দিন পর্যন্ত ছিল।

এর চেয়েও বেশি দিনের অচলাবস্থা দেখেছে মার্কিন জনগণ। প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবা তহবিল নিয়ে দুই দলের সিনেটরদের বিবাদে ডিসেম্বর ১৯৯৫ সাল থেকে জানুয়ারি ১৯৯৬ সাল অবধি মোট ২৭ দিন কেন্দ্রীর সরকারের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তারও এক মাস আগে নভেম্বরে ৪ দিনের জন্য এ ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্ট হয়েছিল।

যেভাবে একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন তাতে এবারকার অচলাবস্থা কত দিন স্থায়ী হয়, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

অর্থনৈতিক ক্ষতি

স্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর জানাচ্ছে, চলতি ২০১৮ সালের এ অচলাবস্থায় প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বোভিনো মনে করেন, বছরের শুরুতে হওয়ায় এ ক্ষতি পরবর্তীতে পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, ২০১৩ সালে ১৬ দিনের অচলাবস্থায় এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার।

যমুনা অনলাইন: এফএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply