এহসান আবদুল্লাহ:
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। সে হিসেবে এ বছরের ২২ মার্চ নির্ধারিত এক বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছে ডাকসুর নির্বাচিত পর্ষদ। এরপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পর্ষদের মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদও আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হচ্ছে।
ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ ভিপি-জিএস বাদে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা সাংবাদিকদের কাছে নিজ নিজ পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত স্বপদে থেকে অসমাপ্ত কাজ চালিয়ে যেতে করতে চান ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানী।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক এজিএস সাদ্দাম হোসেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সদস্য রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, পরিবহন সম্পাদক শামস ই নোমান, সদস্য নজরুল ইসলাম, সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা শিকদারসহ অনেকেই।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ডাকসু নেতৃত্ব গত বছরের ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। এই সংসদের মেয়াদ চলতি বছরের ২২ মার্চ এক বছর পূর্ণ হয়। তবে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় মেয়াদ আরো ৯০ দিন বৃদ্ধি করা হয়। সেই মেয়াদ বৃদ্ধির সময় আজ শেষ হচ্ছে।
ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গঠনতন্ত্র মেনেই সবকিছু করা হবে। আমাদের গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তীতে কি প্রক্রিয়ায় ডাকসু পরিচালনা করা হবে বা নির্বাচন কবে নাগাদ হবে তা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এটাতো একদিনেই করা সম্ভব না, এটার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো।
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, করোনাকালীন দুর্যোগের কারণে নির্ধারিত এক বছর কাজ করার সময় পাইনি। সেইসাথে বর্ধিত ৯০ দিনও দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
নুর আরও বলেন, যেহেতু এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছি ফলে এই সংসদ ভেঙ্গে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলার সুযোগ থাকবে না। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কাজেই নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে আমাদের সুযোগ দেয়া হোক।
সহ-সম্পাদকসহ অন্যান্য ডাকসু নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নুর বলেন, তারা একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হয়তো তাদের দলের নির্দেশে এইরকম ঘোষণা দিয়েছেন।
মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দায়িত্বে থাকার প্রয়োজনীয়তা বা যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন ডাকসুর সভাপতি ও উপাচার্য। তিনি চাইলে আমারা দায়িত্বে থাকবো না।
মেয়াদ শেষ হবার পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদগুলোর দাফতরিক কোনো ক্ষমতা না থাকায় চাইলেও পদত্যাগ বা দায়িত্বে থাকার ইচ্ছা পোষণ করার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।
অন্যদিকে, ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, “ডাকসুর বিষয়ে আমার বক্তব্য একদম স্পষ্ট। নির্ধারিত মেয়াদের অতিরিক্ত ১ মিনিটও পদে থাকতে চাইনা। আজ রাত ১২.০০ ঘটিকায় পদ ছেড়ে দেবো। বল তখন থাকবে ডাকসুর সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় উপাচার্য মহোদয় এর কোর্টে… আমাদের দাবী থাকবে।”
তিনি আরও লিখেন, করোনা দুর্যোগের জন্য যে সাড়ে তিন মাস আমরা কাজ করতে পারিনি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে সময়টুকু আমাদের প্রাপ্য, আর সেই সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী নির্বাচনও আয়োজন করে ফেলতে পারবে। তাহলে ডাকসুর গঠনতন্ত্র (৬ এর গ ধারা) মেনেই আমরা নতুন নেতৃত্বের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারবো।
ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়া মানে দায়িত্ব শেষ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আর দায়িত্বে থাকার সুযোগ নেই। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ডাকসুর ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর দ্রুত নির্বাচন আহ্বান করতে হবে।
ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, মেয়াদ শেষ তার মানে আমার দায়িত্বও শেষ। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দায়িত্ব আকড়ে থাকা গঠনতন্ত্র বিরোধী। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথেই পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ডাকসু নিয়ে কোন ধরনের কালবিলম্ব ছাত্ররা মেনে নিবে না।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক বাদে ২৫টি পদের ২৩টিতে নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ। ভিপি পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন একই প্যানেলের আখতার হোসেন।
Leave a reply