লিবিয়ায় অন্তত ১০টি ক্যাম্পে নির্মম নির্যাতনের পর ইতালিতে পাচার করা হয় বাংলাদেশিদের। পাচারকারীরা সাগরে ভাসানোকে বলে ‘গেমিং’। এমনটাই বেরিয়ে এসেছে ক্যাম্প মালিকদের তথ্যে।
জানা যায়, সাড়ে তিন লাখ টাকায় যাওয়া যায় লিবিয়ায়। আর কমপক্ষে সাত লাখ টাকায় সাগরে পাঠানো হয় ইতালিতে। আশ্চর্যজনক তথ্য হলো, লিবিয়া হয়ে ইউরোপে মানবপাচারের সাথে সরাসরি জড়িত কিছু বাংলাদেশি। যে ১০ জায়গায় পাচার করা মানুষদের রাখা হয়, সেই ক্যাম্পগুলোর মালিকও বাঙালিরাই।
কয়েকজন ক্যাম্পমালিকের সাথে কথা হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভুক্তভোগীদের মাঝে তেমনই একজন মাদারীপুরের আল-আমীন হোসেন। লিবিয়ার বেনগাজী থেকে ভিডিও কলে তার সাথে কথা হয় দালালের। দালাল জেনে নেয় পরিস্থিতি। আল আমিনও ভিডিও করে পাঠায় ক্যাম্পে কতজন আছে।
আল-আমীনের মতো অনেক বাংলাদেশি এখনো লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি। জানা যায়, যাত্রীবেশে ঢাকা বা চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই বা শারজায় নেয়া হয়। সেখানে দু/একদিন রাখা হয় তাদের। দুবাই থেকে ট্রানজিট ভিসা ম্যানেজের পর নেয়া হয় মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া, ২/৩ ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর বিমানে লিবিয়ার সাগরপাড়ের নগরী বেনগাজী। সেখানেই শেষ বিমানযাত্রা। বেনগাজির এই ক্যাম্পের মালিক মাদারীপুরের বাদশা। বাইরে বাসার মতো দেখতে হলেও ভেতরে গোডাউন। বাদশা জানায় গত ৫ বছর ধরে কীভাবে মানুষ পাচার করেছেন তিনি।
বাদশার তথ্যমতে বেনগাজি থেকে, আজদারিয়া, সিরত, মিসরাতা, জিনতান, তাজুরার হয়ে ত্রিপলি। সেখানে কয়েকদিন রাখা হয় কয়েকটি ক্যাম্পে। এরপর শতশত মাইল দুরের জানজুর, সুরমান, সারবাতা এবং জুয়ারা। এরমধ্যে সুরমান ও জুয়ারাতে পাচারের বড় বড় ক্যাম্প। অধিকাংশ ক্যাম্পের মালিক বাংলাদেশি। জুয়ারার ঘাট থেকেই সাগরে ভাসানো হয় ইউরোপ বা ইতালির জন্য। জুয়ারা ও সুরমানের দুটি ক্যাম্পের মালিক মাদারীপুরের মনির। ইউরোপের জন্য সাগরে ভাসানোকে তারা বলে ‘গেমিং’।
ঢাকা থেকে পাচারের জন্য টার্গেটের পর পাসপোর্ট ও দুবাইয়ের পর্যটক ভিসা করানো হয় সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই। ইউরোপে মানুষ পাচারের সাথে লিবিয়ার শহর ভিত্তিক মিলিশিয়া বাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড জড়িত বলেও জানায় সেদেশে বসবাস করা এসব দালাল ও ক্যাম্প মালিকরা।
Leave a reply