ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
কসবা সীমান্ত দিয়ে ৭ শিশুসহ ১২ জন নারী-পুরুষের বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। বাধাঁর মুখে গত ৩ দিন ধরে সীমান্তের শূন্য রেখায় ভারতীয় সীমানায় অবস্থান করছে ওই সকল নারী-পুরুষরা।
অনাহার ও অর্ধাহারে তারা মানবেতর দিন পার করছে বলে ভারতীয় নাগরিক জাকির হোসেন টেলিফোনে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জানায়।
এ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় দু‘দেশের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হলেও তথ্য প্রমাণের অভাবে তারা কোন দেশের নাগরিক তা শনাক্ত করা যায়নি। বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
সমাধানের লক্ষ্যে পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতেৃত্ব দেন বিজিবির কসবার কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার করিম উদ্দিন প্রধান এবং ভারতের বিএসএফের পক্ষ নেতৃত্ব দেন কমলাসাগর বিএসএফ ক্যাম্পের পরিদর্শক প্রবেশ কুমার।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কসবা পৌর শহরের হাকর এলাকার ভারত সীমান্তের ২০৩৯/১২ এস পিলারের নিকট দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ৭জন শিশুসহ ১২জন নারী-পুরুষ কাঁটাতারের বেড়া পার করে বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা করে বিএসএফ। এই সময় টহলরত বিজিবি বাঁধা দেয়।
এই নিয়ে শনিবার সন্ধায় ওই এলাকায় বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়। বৈঠক বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউন চলছে। কাউকে বাংলাদেশে পুশইন করা যাবে না। ওই বৈঠকের পরও ১২জন নারী-পুরুষকে সীমান্তের শূণ্য রেখায় ভারতীয় এলাকায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করতে দেখা গেছে।
অপরদিকে তাদেরকে সীমান্তের অন্য কোন এলাকা দিয়ে যেন পুশইন করতে না পারে এ জন্য পুরো সীমান্ত এলাকায় বিজিবি টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। এদিকে এই ১২জন নারী-পুরুষকে বাংলাদেশের বেদে পরিবারের সদস্য বলে দাবি করেছে তাদের আত্মীয় স্বজনরা।
সকাল ১১টার দিকে ১০-১২জন বেদে মহিলা-পুরুষ কসবা বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়। বিজিবি তাদের তাড়িয়ে দিলে এরা স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। দেলোয়ার হোসেন (৪০), মঙ্গল মিয়া (৫০) নামক দুই বেদে সর্দার জানায়, তারা কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার হাড়িখোলা গ্রামের অধিবাসী। কেউ কেউ ঢাকার সাভারের কাঞ্চনপুর এলাকার অধিবাসী।
বেদে সর্দাররা জানান, বাংলাদেশ-ভারতের শুন্য রেখায় আটক শিশু, নারী-পুরুষরা তাদের আত্মীয় এবং পরিবার পরিজন। গত ৩ মাস পূর্বে এরা একটি শিশুর চিকিৎসা করতে এবং তাদের পেশাগত কাজ করতে বৈধভাবে ত্রিপুরায় পাড়ি জমায়। সেখানে যাওয়ার পর এরা লকডাউন আটকা পড়লে বিএসএফ তাদের পুশইন করতে নিয়ে আসে।
পরে এসকল বেদেরা কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম এর সাথে দেখা করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম জানান, বেদে সম্প্রদায়ের কিছু লোক আমার কাছে এসেছিলো। আটকে পড়া বেদেরা যদি চান্দিনার বাসিন্দা হয়, তাহলে সেখানকার নির্বাহী অফিসার এবং চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র নিয়ে এলে তিনি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি জানাবেন।
এই ব্যাপারে বিজিবির ৬০ ব্যাটেলিয়ন অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল এস এম মেহেদী হাসান বলেন, আটকে পড়া মানুষগুলোর সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাই তারা বিএসএফের পুশইনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় বিএসএফ বিজিবি স্ব-স্ব সীমানায় টহল জোরদার করেছে।
Leave a reply