চলতি ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় ৫ বছরের কম বয়সী ৩৯ লাখ শিশু তীব্র রুগ্নতার শিকার হতে যাচ্ছে। করোনায় সৃষ্ট অপুষ্টির কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার ইউনিসেফ আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে অপুষ্টি প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ২৪০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে সংস্থাটি।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ৬৭ লাখ শিশু তীব্র রুগ্নতার শিকার হতে পারে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে। যার অর্ধেকেরও বেশি (৫৮ শতাংশ বা ৩৯ লাখ) হতে পারে শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই।
তীব্র রুগ্নতা হচ্ছে অপুষ্টির এমন একটি রূপ যা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি শিশুদের খুব রুগ্ন ও দুর্বল করে দেয়। এটি তাদের মৃত্যু, সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ না হওয়া এবং শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে।
ইউনিসেফের মতে, কোভিড-১৯ মহামারির আগেও ২০১৯ সালে ৪ কোটি ৭০ লাখ শিশু তীব্র রুগ্নতায় ভুগেছে। যাদের মধ্যে ১৭ লাখ শিশুর বসবাস বাংলাদেশে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে এ বছর বিশ্বব্যাপী তীব্র রুগ্নতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছতে পারে। এতে বৈশ্বিকভাবে শিশুদের তীব্র রুগ্নতায় ভোগার হার এমন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে, যা এই শতাব্দীতে আর দেখা যায়নি।
ল্যানসেটের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর আর্থ-সামাজিক প্রভাবের কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এ বছর পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মাঝে তীব্র রুগ্নতার প্রাদুর্ভাব ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর হার এত উচ্চমাত্রায় বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে- বাংলাদেশে তীব্র রুগ্নতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ২০১৯ সালের ১৭ লাখ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ১৯ লাখ হবে।
মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে নানাবিধ জটিলতা নিয়ে তীব্র রুগ্নতায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ভর্তির হার কমে হয়েছিল শুধু ১০ শতাংশ। যদিও অপরিহার্য পুষ্টি সেবাগুলো পুনরায় চালু হতে শুরু করেছে, তবে এসব সেবা এখনও তাদের যথাযথ সক্ষমতায় ফিরেনি। মহামারী শুরুর আগের সময়ের তুলনায় ২০২০ সালের জুনে হাসপাতালে ভর্তির হার ছিল ৫৬ শতাংশ।
মহামারির প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকের মাসগুলোতে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বৈশ্বিকভাবে অপরিহার্য এবং প্রায়শই জীবন রক্ষাকারী পুষ্টি পরিষেবাগুলোর আওতা সার্বিকভাবে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিছু দেশে লকডাউন ব্যবস্থার কারণে এই বিঘ্নের হার ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে।
Leave a reply