কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় মা ও মেয়েসহ ৫ জনকে ‘গরু চোর’ অপবাদ দিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিরানুল ইসলামসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ভুক্তভোগী পারভীন আক্তার চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন চকরিয়া উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিরানুল ইসলাম, হারবাং বৃন্দাবনখিল এলাকার জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাস্টার মাহমুদুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২)।
চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি ৩ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তাদেরকে গতকাল গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন পুলিশ।
মামলার এজাহারে বাদি পারভীন আক্তার দাবি করেন, ২১ আগস্ট শুক্রবার একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা নিয়ে আমি আমার দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার, রোজিনা আক্তার ও ছেলে এমরান এবং তার বন্ধু ছুট্টুসহ ডুলাহাজারাস্থ পূর্ব হাইদারনাশির আমার ছোট মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম।
আমাদের বহনকারী অটোরিক্সাটি হারবাং বৃন্দাবনখিল লালব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দুটি মোটরসাইকেলে করে মোট ৬ জন লোক আমাদের পিছু নেয়। পরে আমাদের গাড়িচালক ভয় পেয়ে হারবাং স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল আরোহী ৬ জনসহ আরও বেশ কয়েকজন নোক আমাদের অটোরিক্সাটি আটকে ফেলে।
এজাহারে তিনি আরও দাবি করেন, আমাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসে। ইতোমধ্যে আমাদের ধাওয়া করা ওই লোকগুলো গরু চুরির অপবাদ দিয়ে আমাদের মারধর শুরু করে। এ সময় আসামিরা আমাদের কাছে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা, কানের দুল (স্বর্ণের) ও গলার চেইন এবং চারটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
পরে স্থানীয় লোকজনসহ আসামিরা আমাদের কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। ওখানে নিয়ে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দ্বিতীয় দফায় আবারও আমাদের অকথ্যা ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে প্রথমে চেয়ার দিয়ে এবং পরে একটি লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
এজাহার নামীয় আসামি ও অজ্ঞাত আসামিরা আমাদের হেয় করার জন্য ও মানহানি করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এই মামলায় আইনি ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ কমিশন কর্তৃক ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক জানান, হিউম্যান রাইটস এর পক্ষ থেকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ, ও তিনি নিজেসহ কয়েকজন আইনজীবী এই মামলাটি পরিচালনা করবেন। তারা ভুক্তভোগীদের আইনী সহায়তা প্রদান করছেন।
মামলা বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হারবাংয়ে মা-মেয়েসহ ৫ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগী পারভীন আক্তার বাদি হয়ে থানায় একটি এজাহার দেন। ওই এজাহারটি মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই মামলায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে। এই মামলার অন্যতম আসামি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামকে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
Leave a reply