কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আরটিপিসিআর পরীক্ষা কার্যক্রম বা র্যাপিড টেস্ট চালু করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। শনিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ধানমন্ডিস্থ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ২য় তলায় অত্যাধুনিক মলিউকিউলার ল্যাবরেটরির উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
এর আগে সকাল ১১টায় র্যাপিড টেস্টের উদ্বোধন উপলক্ষে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্টের উদ্ভাবক দলের প্রধান অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল, র্যাপিড কিট টেস্টের গবেষক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ফিরোজ আহমেদ।
এ সময় আরেও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি সন্ধ্যা রায় ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিটিক্যালস, অধ্যাপক ডা. বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মামুন মোস্তাফী, অধ্যাপক ডা. নাজিব মোহাম্মদ, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, গণস্বাস্থ্যের ল্যাবরেটরি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক ডা. বদরুল হক, প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. গোলাম মোহাম্মদ কোরেইশী, অধ্যাপক শওকত আরমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আপনারা অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। টেস্টের ক্ষেত্রে ওয়ার্কার যেনো সংক্রামিত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে টেস্টগুলো করতে হবে। আবার স্যাম্পলেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং রেজাল্ট কারেক্ট করতে হবে। আমাদের স্যাম্পল কালেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে ভুল হলে পজেটিভ একজন মানুষ কিন্তু নেগেটিভ হতে পারে। সব রেজাল্ট ঠিক হলো কিন্তু এক জনের নামের যায়গায় আরেকজনের নাম চলে আসলো তখনও ভুল হতে পারে। সব কিছু স্বীকার করেই যত্ন নিয়ে কাজ করতে হবে।
টেস্টের পাশাপাশি গবেষণায় জোর দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কোভিড নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। ল্যাবরেটরিতে শুধু মাত্র রুটিন টেস্ট হবে না, গবেষণাও হবে বলে আমি আশা করছি।
অণুজীব বিজ্ঞানী ডা. বিজন কুমার শীল বলেন, জানুয়ারি মাসে যখন আমরা কাজ শুরু করি তখনই আমাদের এই ল্যাবরেটরির পরিকল্পনা ছিলো। এখন আমাদের ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। সমস্ত মেশিনারিজ চলে আসছে। বলে রাখি, ২০০৩ সালে করোনাভাইরাসের পিসিআর টেকনিকটি সিঙ্গাপুরে আমরা তৈরি করেছিলাম। এর পরে যখন এটা হারিয়ে গেলো তার পরে আর কোনো কিছু হয় নাই। পরে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস যখন আবার ফিরে এলো পিসিআরই একমাত্র টেস্ট হলো করোনাভাইরাস ডিটেক্টশনের জন্য। আমরা মূলত স্রোতধারার সঙ্গে আজকে মিলিত হতে যাচ্ছি।
র্যাপিড কিট টেস্টের গবেষক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ফিরোজ আহমেদ বলেন, এখান থেকে আমরা প্রতিদিন ২০০ টি টেস্ট করতে পারবো। আমরা চেষ্টা করবো যাতে আমাদের টেস্টের কোয়ালিটি খারাপ না হয়, নির্ভুল হয়। আমরা চেষ্টা করেছি প্রাইভেট হাসপাতালে যে দামে টেস্টটি করানো হয়, এখানে তার চেয়ে কমে করাতে। আশা করি এখান থেকে টেস্ট করে কেউ বলবে না, যে আমি ভুয়া টেস্টের শিকার হয়েছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, টেস্টের পাশাপাশি আমরা গবেষণায় মনোযোগী হচ্ছি। আমরা ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি গবেষণার জন্য। আর আমরা সর্বোচ্চ কোয়ালিটি মেনটেইন করছি।
কোভিড টেস্ট কেলেঙ্কারির জন্য সরকার দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটার জন্য সরকার দায়ী। সরকারের অপরিনামদর্শীতা, চিন্তা না করে কথা বলা ও কোনো বিশেষজ্ঞয়ের পরামর্শ না নেয়া, এসব ভুলের কারণে এ অবস্থা। আজ থেকে দুই মাস আগে চায়না যখন ভ্যাক্সিন ট্রায়াল করতে চাইলো, আমি বললাম আজকেই করেন। তাহলে কি আমার দেশের লোকেরা উপকৃত হতো। তার চেয়ে লাভ হতো, আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পেতো, আমার দেশের লোকেরা শিখে নিতে পারতো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে নাম করেছে তার ওষুধ নীতির কারণে। ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশে পৃথিবীতে নাম করতো যদি অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দিতো। এ সময় তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, র্যাপিড টেস্ট করতে বাইরের একজন রোগীকে গুনতে হবে ৩ হাজার টাকা। আর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যাদের স্বাস্থ্য বীমা আছে তাদের দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগী সংগঠন গণস্বাস্থ্য আরএনএ বায়োটেক লি. এর সার্বিক সহায়তায় একটি অত্যাধুনিক মলিকিউলার ডায়াগনোসটিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে ।
ইউএইচ/
Leave a reply