চিলিয়ান কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৩ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা প্রথমে তার ছদ্মনাম হলেও পরে নামটি আইনি বৈধতা পায়।
কৈশোরে তিনি এই ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। পাবলো নেরুদাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী লেখক মনে করা হয়। তার রচনা অনূদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়।
নেরুদার সাহিত্যকর্মে বিভিন্ন প্রকাশ শৈলী ও ধারার সমাবেশ ঘটেছে। একদিকে তিনি যেমন লিখেছেন টোয়েন্টি পোয়েমস অফ লাভ অ্যান্ড আ সং অফ ডেসপায়ার-এর মতো কামোদ্দীপনামূলক কবিতা সংকলন, তেমনই রচনা করেছেন পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, এমনকি প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইস্তাহারও।
১৯৭১ সালে নেরুদাকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একদা নেরুদাকে “বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি” বলে বর্ণনা করেন।
জীবদ্দশায় নেরুদা একাধিক কূটনৈতিক পদে কাজ করেন। একসময় তিনি চিলিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির সেনেটর ছিলেন। কনজারভেটিভ চিলিয়ান রাষ্ট্রপতি গঞ্জালেস ভিদেলা চিলি থেকে কমিউনিজমকে উচ্ছেদ করার পর নেরুদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তার বন্ধুরা তাকে চিলির বন্দর ভালপারাইসোর একটি বাড়ির বেসমেন্টে কয়েক মাসের জন্য লুকিয়ে রাখেন। পরে গ্রেফতারি এড়িয়ে মাইহু হ্রদের পার্বত্য গিরিপথ ধরে তিনি পালিয়ে যান আর্জেন্টিনায়। কয়েক বছর পরে নেরুদা সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রপতি সালভাদর আলেন্দের এক ঘনিষ্ঠ সহকারীতে পরিণত হন।
চিলিতে অগাস্তো পিনোচেটের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভ্যুত্থানের সময়েই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন নেরুদা। তিন দিন পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার।
জীবন্ত কিংবদন্তি নেরুদার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পিনোচেট নেরুদার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে জনসমক্ষে অনুষ্ঠিত করার অনুমতি দেননি। যদিও হাজারে হাজারে শোকাহত চিলিয়ান সেদিন কার্ফ্যু ভেঙে পথে ভিড় জমান। পাবলো নেরুদার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিণত হয় চিলির সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম গণপ্রতিবাদে।
Leave a reply