ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে কালন্দি খাল দিয়ে নেমে আসা দূষিত কালো পানি পরিদর্শন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণ করেছে যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ অংশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) স্থাপন সম্পর্কিত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মুহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি শনিবার দুপুরে আখাউড়ায় ভারত থেকে কালন্দি খাল দিয়ে নেমে আসা বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত কালো পানি পরিদর্শন করে।
এর আগে ১ অক্টোবর পরিবেশ সদর দফতরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক ড. ফাহমিদা খানমের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল আখাউড়ায় ভারত থেকে নেমে আসা বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত কালো পানি পরিদর্শন করে। এসময় তারা পানি পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ করে।
জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত কালো পানি আসার কারণে ক্রমশ হুমকির মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার খাল-বিল, নদীসহ উপজেলার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত এ পানির গন্ধে যুগ যুগ ধরে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে আখাউড়া উপজেলার ত্রিপুরা সীমান্তঘেঁষা অন্তত ১০-১৫টি গ্রামের হাজার হাজারো মানুষ। বর্ষাকালে বৃষ্টির মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত এ কালো পানি ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে। এতে চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগ বেড়ে যায় মানুষের।
বিষাক্ত এ পানি বন্ধের ব্যাপারে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও কার্যত কিছুই হচ্ছে না। রাসায়নিক মিশ্রিত এ পানি ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) মাধ্যমে পরিশোধন করে ছাড়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাঠ পরিদর্শন আর বৈঠক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর অভিযোগ।
স্থানীয়রা জানায়, আগরতলা শহরের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল, শিল্প কারখানা ও হোটেল, বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন বর্জ্যযুক্ত বিষাক্ত পানি কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই আখাউড়া স্থলবন্দর সংলগ্ন কালন্দি খাল দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে।
বাসিন্দারা বলেন, বিষাক্ত কালো পানির প্রভাবে তারা অনেকেই নানা ধরণের রোগে ভুগছেন। কৃষকরা মাঠে কাজ করতে যান; পানির সংস্পর্শে গেলেই চর্ম ও শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছেন কৃষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দূষিত পানি দিয়ে ধান চাষ করে ওই চাল থেকে ভাত খেলেও প্রাণীদেহে রোগ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা রয়েছে।
স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বাবুলসহ একাধিক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ কালো পানির সমস্যা সমাধানের দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে কালন্দি খাল দিয়ে বয়ে আসা দূষিত কালো পানির ক্ষতিকর দিক সমুহ ও ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) স্থাপন সম্পর্কিত বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ পর্যবেক্ষণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্যই কালন্দি খাল এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ অংশের সদস্য মুহাম্মদ আলী।
এসময় যৌথ নদী কমিশনের (বাংলাদেশ) পরিচালক মো. মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a reply