ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ কৃষকরা বারোমাস জুড়ে সবজি আবাদ করায় তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। তাদের নিজস্ব পতিত জমি, বাড়ির আঙ্গিনায় মৌসুম বেঁধে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, ঢেঁড়শ, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনে পাতাসহ নানা প্রকার নানা প্রকার সবজি চাষ করছে।
কীটনাশক মুক্ত ওইসব শাক সবজি উৎপাদন করে নিজ পারিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে তারা বাড়তি আয় করছেন। যারা সবজি চাষ করছেন তারাই আবার পাড়া মহল্লায় ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। কম শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
জেলার আখাউড়া পৌর এলাকার তারাগন, দেবগ্রাম, নারায়নপুর, উপজেলার কালিনগর, সাতপাড়া, হীরাপুর, বাউতলা, উমেদপুর আজমপুর, চানপুরসহ নতুন সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এসব এলাকার বেশিরভাগ কৃষক মৌসুম বেঁধে বারো মাসই সবজি আবাদ করছেন। কেউ করছেন বাড়ির ছাদে। বেশিরভাগ লোকজনই কৃষি অফিসের পরামর্শে এ চাষ করছেন।
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের কৃষক মো. শামসুল ইসলাম বলেন- স্ত্রী, ছেলে মেয়েসহ ৬ জনের সংসার। জায়গা জমিও তেমন নেই। অন্য কোন কাজ না থাকায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সবজি আবাদের উপর চলে তার সংসার। বাড়ি সংলগ্ন ৩০ শতক পতিত জমিতে কোন প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই তিনি বছরজুড়ে দেশীয় পদ্ধতিতে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, ঢেড়শ, বরবটি, লাউ ও পাটশাক, শশা, বেগুন করলা, চাষ করছেন।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি নষ্ট হয়। এরপর আবার চাষ করা হয়। জমি তৈরী করে বীজ লাগানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা গঁজিয়ে ওঠে। এরপর পরিচর্যা, পানি, সার ও মাচা তৈরীসহ অন্যান্য কাজ করা হয়। এলাকায় সবজির ভালো চাহিদা রয়েছে। সবজি চাষ ও বিক্রি নিজেই করেন। ভ্যান গাড়ি নিয়ে ঘুরে দৈনিক এলাকায় ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেন। খরচ বাদে প্রতিমাসে তার ১৮-২০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।
মনিয়ন্দ এলাকার মো. আবু ইউসুফ বলেন, ধান জমি বর্গা করার পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন ২০ শতক জায়গায় গত দুই বছর ধরে লালশাক, ডাটাশাক, পুইশাক, কলমিশাক, বরবটি, টমেটো, লাউ, পাটশাক, বেগুন, পেপেসহ নানা প্রজাতির সবজি তিনি চাষ করছেন। উৎপাদিত সবজি থেকে বাড়তি আয় করে ১ ছেলে ও ২ মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের খরচ ও তিনি করছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় হয় বলেও জানান তিনি।
গৃহিনী আফিয়া আক্তার বলেন, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে ভাল ফলন না পাওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে নানা প্রকার সবজি চাষ তিনি করছেন। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে সবজিতে তার প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান।
এই ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, কৃষককের মাঝে স্বল্প মেয়াদী শাক সবজি ও মধ্য মেয়াদী লতা জাতীয় শাক সবজির বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ।
Leave a reply