পত্রিকার পাতা ওল্টালে বা টেলিভিশনের চ্যানেল পরিবর্তন করলেই ‘ধর্ষণ’-এর খবর। অনেক পাঠক-দর্শক অভিযোগ করে বলেন কথাটি। বাস্তবতাও যে তাই। ‘সংবাদের উপাদান’ বা ‘নিউজ এলিমেন্ট’ থাকলে যত নির্মমই হোক না কেন, এড়ানোর সুযোগ কই?
মাস দু-তিনেক আগের কথা। আলোচনায় আসে ভারতের একটি গণমাধ্যমের খবর। ১০ বছরের এক শিশুকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করেছে তারই চাচা। মামলা চলছে, সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করছে দুই পক্ষ। হঠাৎই সামনে এল নির্যাতনের শিকার শিশুর আঁকা একটি ছবি। মেয়েটি এঁকেছে, একটা জামা মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। ছবির এই অংশটিকেই সব থেকে বড় প্রমাণ হিসেবে নিয়েছিলেন আদালত। বিচারক বলেছিলেন, ‘হাতে আঁকা ছবিটি দেখলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কেউ তার ঘরে আসত এবং বিবস্ত্র করে তার ওপর নির্যাতন চালাত। এটাই তার ওপর হওয়া নির্যাতনের সব থেকে বড় প্রমাণ। আমি এই ছবিকে শিশুর ওপর হওয়া যৌন নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করছি।’ পরে মামলার বিচার শেষ হয়েছে। আসামিকে শাস্তিও দেয়া হয়েছে।
ভারতের এই মামলাটি নেহায়েত একটি উদাহরণ। মামলার কার্যক্রমের ধরণ কিংবা শিশুর আঁকা ছবির কারণে হয়ত কিছুটা ব্যতিক্রম বলে অনেক ঘটনার মধ্যেও আলাদাভাবে নজরে এসেছে। কিন্তু এমন কত শিশু বা নারী প্রতিদিন, প্রতিসপ্তাহে কিংবা প্রতিমাসে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তার পূর্ণ হিসাব রাখা হচ্ছে না। সংখ্যা এতই বেশি যে, হয়ত রাখা-ই সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশেও মহামারি বা সামাজিক বিপর্যয় হিসেবে সামনে এসেছে ‘ধর্ষণ’। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য, প্রতি বছর ধর্ষণের মামলাগুলোর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় চার ভাগেরও কম। আর সাজা হয় হাজারে মাত্র চার আসামির। পরিসংখ্যানটা দেখলেই একটি প্রশ্ন জাগে, এত সহজেই যখন আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে কি এদেশে থামানো যাবে ধর্ষণ?
আইনের কথা যখন এল, তখন শাস্তি’র কথায় আসা যাক। বাংলাদেশে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া সৌদি আরবে শিরশ্ছেদ, চীনে মৃত্যুদণ্ড, ভারতে আমৃত্যু কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে ধর্ষণের দায়ে। আর নেদারল্যান্ডসে? তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে। গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে অনুমতি ছাড়া ‘ফ্রেঞ্চ কিস’কেও তারা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে আইন করেছে দেশটি। এটাকে অনেকটা আদিম অপরাধও বলা যেতে পারে। কারণ প্রাচীন রোমের লোকজনের মাঝেও এমন প্রবণতা ছিল। ছিল শাস্তির বিধানও। বিশেষ একটি পদ্ধতির মাধ্যমে শাস্তি হিসেবে কেড়ে নেয়া হতো ধর্ষকের যৌনক্ষমতা। সেই প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে এই অপরাধ, আছে আইন এবং শাস্তি। তবুও কেন থামেনি বা থামছে না এই অপকর্ম? কী ওষুধে সারবে এই অসুখ?
মুরশিদুজ্জামান হিমু: সাংবাদিক
Leave a reply